ঢাকা: বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করানোর পর এখন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদ থেকেও পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ড. মালা খান।
তিনি বলেছেন, সকল ষড়যন্ত্র যখন একে একে ব্যর্থ হয়েছে তখন নতুন করে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে মালা খান এসব অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, এত সবের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে তৈরি প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করা। এখানকার ল্যাবে টেস্ট বন্ধ রয়েছে। যেসব টেস্ট বন্ধ রয়েছে, সেগুলো পার্শ্ববর্তী দেশে নিয়ে করা হবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। এর পেছনে একটি শক্তিশালী চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মালা খান তার বিরুদ্ধে আনা নানান ষড়যন্ত্রের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তার পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া, এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে অভিযোগ ওঠে। এরপর তদন্ত হয়। হাইকোর্টে মামলা হয়। সেই মামলার চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে রায়ে আমি জয়লাভ করি। পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়টি একটি মীমাংসিত ইস্যু। এরপরেও নতুন করে পুরনো জিনিস বারবার সামনে নিয়ে আসছে চক্রটি। আমি যে বিষয়ে পিএইচডি করেছি, সেই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি ৮তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। সেটি দৃশ্যমান ডিগ্রির ফসল।
প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে মোট তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, যার মোট টাকার পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু বলা হচ্ছে আমি নাকি হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছি। প্রকল্প চলাকালীন ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সকল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সিআইডি তদন্ত করেছে, মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে। কিন্তু কেউ দোষী সাব্যস্ত করতে পারেনি। কারণ অভিযোগ উঠেছিল মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে।
সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে ড. মালা খান বলেন, মশিউর রহমান ২০২০ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। তার রাজনৈতিক পরিচয় কী, তাও জানি না। তিনি একজন জুনিয়র কর্মকর্তা। সুতরাং তার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ থাকার প্রশ্নই আসে না। তাকে গত ২৩ জানুয়ারি ফৌজদারি অপরাধে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে লাগা চক্রটি অভিযোগ করছেন, মশিউরকে নাকি আমি অপহরণ করেছি। মশিউর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন, সেটা তার বন্ধুরা ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। যেখানে নতুন করে একজন মহাপরিচালক আছেন, আমি অফিসে যেতে পারছি না, সেখানে আমার কথায় কি আইন আর পুলিশ চলে নাকি? মূলত অপহরণ আর গুমের অভিযোগ তুলে সামাজিকভাবে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। পারিবারিকভাবে আমি নিরাপত্তাহীনতা ভুগছি। আমি আমার ও পরিবারের সদস্যদের জন্য রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাই।
মালা খান অভিযোগ করে বলেন, গত বছরের ১২ আগস্ট মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ল্যাব ও অফিসের চাবি আন্দোলনরত চক্রটির সদস্যরা দখলে নিয়েছেন। গত দুই মাস ধরে অফিসে প্রবেশ করতে পারিনি। তারা নানা সময় আমার ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল ফাইলপত্র ঘাটাঘাটি করেছেন। সেখান থেকে কাগজপত্র নিয়েছেন। অনেক কনফিডেন্সিয়াল ডকুমেন্ট বাইরে সরবরাহ করেছেন। এমনকি তারা ডকুমেন্ট টেম্পারিংও করেছেন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং থানায় জিডি করেছি। সেসব কাগজ দিয়ে নানান জায়গায় অভিযোগ করছেন এবং ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি জানতে চাই, যারা অফিস তালা মেরে আন্দোলন করছেন, তারা কি মাসের বেতন তোলা বন্ধ করেছেন? যারা জনগণের সেবাকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চান, তারা কোন পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ?
সবশেষ তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা যত অভিযোগ রয়েছে, তা তদন্তের জন্য উন্মুক্তভাবে আহ্বান করছি। তদন্তে আমি দোষী সাব্যস্ত হলে আমি মাথা পেতে নেব। তবে তদন্তের আগেই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া মোটেও আইনি কাঠামোয় পড়ে না। আর যারা আন্দোলন করছেন, তারা না বুঝেই কোনো চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলন করছেন এবং দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২৫
টিএ/এমজেএফ