ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক গ্রেপ্তার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া  প্রতারক গ্রেপ্তার গ্রেপ্তার ইমরান

ঢাকা: মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক পেশাদার প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম সওকত হোসাইন সুমন ওরফে আশরাফুল চৌধুরী ইমরান (৩৯)।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

তিনি জানান, সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক ইমরানকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির বিমানবন্দর থানা পুলিশ।

বিমানবন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, জনৈক ডা. এএসএম বদরুদ্দোজার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্র ধরে আশরাফুল চৌধুরী ইমরান ও তার সহযোগীদের পরিচয় হয়।  

ইমরান জানায়, সে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে এবং বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সদস্য পদ নিয়ে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করতে পারবে। এ বিষয়ে ইমরান ও তার সহযোগীদের সঙ্গে বদরুদ্দোজার কয়েক দফা মিটিং হয়।

গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাদের সঙ্গে বদরুদ্দোজার আরও একটি মিটিং হয় এবং তারা ভিকটিম বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সদস্য পদ নেওয়ার জন্য ৭ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানায়। তাদের কথা বিশ্বাস করে বদরুদ্দোজা গত ১৮ নভেম্বর উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে ইমরান ও তার সহযোগীদের ৭ হাজার ডলার দেন। দুইদিন পর গত ২০ নভেম্বর ইমরান ও তার সহযোগীরা বদরুদ্দোজাকে জানায় তিনি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সদস্য পদ পেয়েছেন এবং এখন তাকে দুই লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের ফলে তিনি লভ্যাংশ বাবদ সপ্তাহে পাঁচ হাজার  ডলার পাবেন। ভুক্তভোগী বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি দেখে তার আগের দেওয়া ৭ হাজার ডলার ফেরত চেয়ে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রতারকরা তাকে নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করায়।

এরপর ভিকটিম গত ১৮ ডিসেম্বর উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে প্রতারক চক্রকে তাদের কথামতো দুই লাখ ডলার দেন। এরপর তারা ভিকটিমকে জানায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সদস্য পদ ও বিনিয়োগের যাবতীয় কাগজপত্র ও প্রদানকৃত ইউএস ডলার গ্রহণের রশিদ সিঙ্গাপুর থেকে তাদের কোম্পানির কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষর করে ওইদিন (১৮ ডিসেম্বর) রাতেই পাঠাবে। এরপর তারা ভিকটিমকে কাগজপত্রগুলো পাঠিয়ে দেবে। রাতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ভিকটিম তাদের কয়েকবার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন কিন্তু তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। তখন ভিকটিম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। তিনি তাদের খপ্পরে পড়ে দুই ধাপে ২ লাখ ৭ হাজার ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ডা. এএসএম বদরুদ্দোজা বাদী হয়ে গত ২০ ডিসেম্বর বিমানবন্দর থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের একজন ইমরানের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক ইমরানকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল চৌধুরী ইমরান স্বীকার করেছেন, তিনি ও তার সহযোগীরা পেশাদার প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সদস্য পদ দেওয়া ও বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। গ্রেপ্তারকৃত ইমরানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আরও  একটি প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৫
এসসি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।