ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দখল-দূষণে বিলীন ফেনীর বেশির ভাগ খাল

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
দখল-দূষণে বিলীন ফেনীর বেশির ভাগ খাল

ফেনী: চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। দুর্ভোগে পড়েছে জেলার অন্তত ১৭ লাখ মানুষ।

অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বিপুল পরিমাণ। যে ভয়াবহ বন্যায় এ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, তার মূলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে ফেনীর ছয় উপজেলার অন্তত ২৪৪টি খাল ও শাখা নদীর দখল-দূষণ। এসব খালের পানির প্রবাহ ঠিক করা না গেলে বন্যা প্রতিবছর ভাসাতে পারে ভাটির এ জনপদকে। এমন আশঙ্কা ভুক্তভোগীদের।

এখনকার এ শহরের হালের প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প মনে হলেও দখল-দূষণে মৃতপ্রায় এ খালেই এক সময় চলাচল করতো মালবাহী বাণিজ্যিক নৌকা। ছোট-বড় নৌকাগুলো ভিড়তো শহরতলীর দাউদপুল এলাকায়। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা পণ্যের সমারোহে বসতো মাসব্যাপী রাসমেলা। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম ভরসা ছিল এ খাল।

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সুফলা বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, আমরা নিজ চোখে দেখেছি ফেনী শহরের দাউদপুল এলাকার বর্তমানের দূষিত খালে এক সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতো নৌকা। সেসব বাণিজ্যিক নৌকা ভিড় করতো এবং পণ্য ওঠা-নামা করতো। সেসব পণ্য যেত জেলার বিভিন্ন এলাকায়। সেই চিত্র এখন ভাবাও মুশকিল।  

শহরের কালিপাল এলাকার বাসিন্দা হরিপদ বলেন, খালগুলো দিয়ে নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠের তৈরি জিনিসপত্র আসতো। খাল পাড়েই প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে রাসমেলা বসতো। সেই মেলা চলতো দুই মাসব্যাপী। এখন সেই খালও নেই, রাসমেলাও নেই।  

এ চিত্র পুরো জেলাজুড়ে। দখল ও দূষণের কবলে ফেনীর ২৪৪টি খাল ও শাখা নদী। চলতি বছরের আগস্টের শেষে ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী এ জনপদ। ঝরেছে প্রাণ, দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন বিপর্যয়কর এ বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ এ দখল ও দূষণ।

কথা হয় জনপদের প্রবীণ সাংবাদিক আসাদুজ্জামান দারার সঙ্গে। তিনি জানান, খাল দখলের এ প্রক্রিয়া এক, দুদিনের নয়। গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধারাবাহিকভাবে খালগুলো একটু একটু করে দখল হচ্ছে। অনেক খাল কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে বিলীন।  

তরুণ গবেষক ও স্থানীয় দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফ রিজভী বলেন, এসব খাল ও পানির প্রবাহ ধ্বংস করার করুণ পরিণতি এবারের বন্যায় মানুষ দেখেছে। বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার বড় কারণ পানির প্রবাহগুলো নষ্ট হওয়া।  

দফায় দফায় উদ্যোগ নিয়েও খাল ও শাখা নদীগুলোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। নানা কারণে উদ্যোগ নিলেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। কাগজে-কলমে থাকলেও ৬০ শতাংশ খালের অস্তিত্বই নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন গতানুগতিক কথা। জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। অভিযান ও পদক্ষেপ চলমান।  

ফেনী সদর শহরের দাউদপুর খাল ও পাগলিছড়া খালের পাশে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলে খাল দখল করা হয়েছে। আড়তের ময়লায় শুধু খালের পানি দূষণই হচ্ছে না, সেই সঙ্গে বন্ধ হচ্ছে পানির প্রবাহ। শহরের অন্য খালগুলোর দশাও প্রায় এক।  

সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় পেট্রোবাংলা, আরামবাগ, পশ্চিম উকিলপাড়া। এবার বন্যায় পেট্টোবাংলা এলাকা প্রায় সাত ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।  

উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন জানান, খালগুলো দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করার বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চলমান।  

তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বড় ভূমিকা রয়েছে।  
 

ছোট ফেনী নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকা একাধিক শাখা খাল তাদের নাব্যতা হারানোয় বন্যার পানি ধীরগতিতে নামছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পরিবেশ অধিদপ্তরের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখেনি স্থানীয়রা।  

জানতে চাইলে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ শওকত আরা কলি জানান, বিভিন্ন সময়ে তারা এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেছেন। এ বিষয়ে আদালত কোনো রায় দিলে সেটি বাস্তবায়নে কাজ করেন তারা।  

ফেনীতে সোনাগাজীর ৫৬টি, দাগনভূঞার ৫২টি, সদর উপজেলার ৩৯টি, পরশুরামের চারটি, ছাগলনাইয়ার তিনটি ও ফুলগাজীর সবকটি খালই দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। এসব খাল দখল ও দূষণরোধে কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।