ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মদের বোতলে জুস ভরে টিকটক, ডোপ টেস্টে নির্দোষ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
মদের বোতলে জুস ভরে টিকটক, ডোপ টেস্টে নির্দোষ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরে পিকনিকের বাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মদের বোতলে করে কোমল পানীয় পানের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। পরে মদ্য পানের অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।

অবশেষে মদ্য পানের ওই ঘটনার জট খুলেছ। ডোপ টেস্ট আর তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে এসেছে টিকটক করে ভাইরাল হতেই মদের বোতলে জুস পানের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে শিক্ষার্থীরা।  

জানা গেছে, টিকটকে আসক্ত হয়ে অভিনব কায়দা বেছে নেয় শিক্ষার্থীরা। জোগাড় করে পুরোনো মদের বোতল। সেই বোতলে জুস ভরে শিক্ষা সফরে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে গাড়িতে আসার সময় মদ ঢেলে খাওয়ার অভিনয়ে যোগ দেন সবাই। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে নেট দুনিয়ায়। বুলিংয়ের শিকার হয় মাদারীপুরের শিকদার হাট উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রধান শিক্ষকের দাবি, ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

পিকনিকের বাসের মদপানের দৃশ্যের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কার হওয়া ইংরেজি শিক্ষক ওয়ালিদ মোর্শেদ জানান, পিকনিকের বাসে তার সঙ্গে স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, মেয়ে মার্জিয়া ও ছেলে ওয়াশিদও ছিলেন। সেখানে বসে মদ পান করার ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ। মূলত বিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী মো. সিয়াম, নাজমুল হাসান, সরোয়ার হোসেন, রবিউল ইসলামের অনুরোধেই মদের বোতলে জুস পানের ভিডিওতে অংশ নেন তিনি। একই বক্তব্য পিকনিকের বাসে থাকা বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদেরও।

জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর জেলার শিবচরের শিকদার হাট উচ্চবিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষা সফরে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও যায় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকেরা। যাওয়ার পথে বাসের ভেতর মদের বোতল থেকে তরলজাত খাবার পান করার ভিডিও ধারণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা মদ হিসেবে প্রচারিত হয় একাধিক গণমাধ্যমেও। ঘটনার পর বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত দুই শিক্ষক ওয়ালিদ মোর্শেদ ও আল নোমান এবং চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।  

পরে ডোপ টেস্টে অভিযুক্তদের সঙ্গে মদের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পরীক্ষায় সবার রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিস আহম্মেদ বলেন, ভিডিওতে দেখলাম ছাত্ররা জুস মিশিয়ে খেয়েছে। এটা আসলে মদ ছিল না। ওরা ভাইরাল হওয়ার জন্যই এটি করেছে।

মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নুর আলম জানায়, বন্ধুরা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার জন্য জুস বোতলে ভরে পান করে। সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে যায়।

শিকদার হাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন শিকদার বলেন, পুরাতন মদের বোতল সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা টিকটকের জন্য জুস ভরে ভিডিও করে। আর সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে একদিকে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। অন্যদিকে মানসম্মান নষ্ট হয়েছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। এটি প্রথমে বুঝতে পারলে সবাইকে সতর্ক করা হতো। শেষমেষ সবাইকে ডোপ টেস্ট করানো হলে, সবার নেগেটিভ আসে রিপোর্টে।

মাদারীপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিব উল্লাহ খান জানান, ঘটনার পর তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তদন্তেও উঠে এসেছে মদ নয়, বোতলে জুস ছিল।

উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত শিকদার হাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৪০০। সেখান থেকে নবম ও দশম শ্রেণির ৪১ শিক্ষার্থী পিকনিকে অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী।

আরও পড়ুন: শিক্ষা সফরের বাসে মদ্যপান, ২ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।