ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২ রমজান ১৪৪৬

ভারত

রমজানে কলকাতার বাজারে কদর বেড়েছে খেজুরের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৫
রমজানে কলকাতার বাজারে কদর বেড়েছে খেজুরের বাহারি খেজুর

কলকাতা: বিশ্বজুড়েই চলছে বরকতময় রোজার মাস। সিয়াম সাধনা, সংযম, ইবাদত এবং আত্মশুদ্ধির জন্য পবিত্র রমজান মাসজুড়েই সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতারের মাধ্যমে রোজাদাররা রোজা ভাঙেন।

রমজানে রোজাদারদের ইফতারের থালায় অন্যতম প্রিয় খাদ্য হিসেবে থাকে খেজুরসহ বিভিন্ন রকমের ফল।  তাই রমজান মাসজুড়ে ইফতারের জন্য কলকাতার বিভিন্ন ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বাহারি জাতের খেজুর।
 
বাহারি খেজুরের টানে কলকাতার বৃহত্তম পাইকারি ফলের বাজার মেছুয়া ফলপট্টিতে ভিড় জমাচ্ছেন খুচরা ফল বিক্রেতার পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতারাও। পাশাপাশি নানা জাতের খেজুরের দেখা মিলছে নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন চিতপুরে দোকানগুলোয়।

কলকাতার শুকনো ফলের ব্যবসায়ী মাকসুদ আনোয়ার জানান, বিভিন্ন পুষ্টিগুণ থাকায় শহরে সারাবছই খেজুরের চাহিদা থাকে। রমজানে খেজুরের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। এছাড়া রমজান মাসে অনেকেই আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা গরিব অসহায় জনদের খেজুরসহ অন্যান্য ফল ও ইফতারসামগ্রী দান করে থাকেন। ফলে রমজান মাসে খেজুরের কদর অনেকটা বেড়ে যায়।

নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন চিতপুর এলাকার শুকনো ফলের দোকান ‘মারহাবা সেন্টার’র নাসিম আখতার বলেন, মেডজুল, আজওয়া, সুক্কারি, কালমি, সাগাই, মরিয়ম, জাহিদি, খুদরি, মাবরুম, সাফায়ি, কিমিয়া, আম্বার, সুফরি, লেগেটি, আলফাজসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির খেজুর রয়েছে। কলকাতায় এসব আসে সৌদি আরব, ইরান, তিউনিসিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।

তিনি জানান, গুণগত মান এবং ভ্যারাইটি অনুযায়ী বিভিন্ন খেজুরের বাজার দরও ভিন্ন। কলকাতার বাজারে আনুমানিক ২শ রুপি কেজি থেকে ১৫শ রুপি কেজি দামের খেজুরের চাহিদা বেশি রয়েছে।  

তিনি জানান, এবার কলকাতার বাজারে উন্নতমানের বাছাই করা ফ্রেশ আজওয়া খেজুরের খুচরো বাজার দাম ১২শ থেকে ১৪শ রুপি কেজি। মাবরুম খেজুর ১২০০-১৪০০ রুপি, কালমি খেজুর ৩০০ রুপি থেকে ৬০০ রুপি, আম্বার খেজুর এক হাজার থেকে ১৪০০ রুপি, সাফায়ি ৭০০-৮০০ রুপি, মরিয়ম ৪০০-৫০০ রুপি, আলফাজ ৪০০ রুপি, কিমিয়া ১৮০, ২৬০ থেকে ৩০০ রুপি, সুফরি ২৮০-৩০০ রুপি, লেগেটি খেজুর ২৫০ রুপি কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে মেছুয়া বাজারে খেজুর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ জানান, সারাবছরে আয়ের জন্য আমরা রমজানের ওপর ভরসা করে থাকি। এ বছরেও বাজার ভালো রয়েছে। খেজুরের মান অনুযায়ী কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে এক হাজার রুপি মধ্যে। এছাড়া ট্যাটকো খেজুর ৩০০-৩৫০ রুপি, নূরী ২৮০-৩০০ রুপি, মাবরুম খেজুর ৪০০ রুপি, কলমি ৬৫০ রুপি, হিলি ২৯০ রুপি, কিমিয়া ২০০ রুপি এবং আলু খেজুর ১১০ রুপির মধ্যে। সবচেয়ে কমদাম চট খেজুর। যার দাম পড়ছে ৮০- ৯০ রুপি প্রতি কেজি।

শিয়ালদহ পাইকারি ফলের বাজারের ব্যবসায়ী হায়দার আলি জানান, রমজান মাসে ইফতারের সময় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় খেজুর। রমজান উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে খেজুর এসেছে। আজওয়া, আম্বান, মেডজুল, হাবিবি খেজুর ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর খেজুরও কলকাতার বিভিন্ন পাইকারি ফল বাজারে এসেছে। ভালো মানের খেজুর খুচরা বাজারে বর্তমানে এককেজির দাম পড়ছে ৭০০-৮০০ রুপি দাম পড়ছে।

ইফতারের সময় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা প্রসঙ্গে কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালের মুখ্য নিউট্রিশনিস্ট (পুষ্টিবিদ) সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ জানান, খেজুরকে বলা হয় সুপারফুড। খেজুর সারাবছর খাওয়া উচিত। রমজান মাসে একজন রোজাদার মানুষ ভোর থেকে উপবাস থাকার পর সন্ধ্যায় রোজা ভঙ্গ করেন। তাদের ইফতারের সময় খেজুর খাওয়া ভীষণ প্রয়োজন। কারণ সারাদিনের উপবাসের পর খেজুর খেলে ক্যালোরি, এনার্জি এবং খনিজ গুন পাওয়া যায় খুব দ্রুত। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেল, প্রাকৃতিক গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ থাকায় শরীরে দ্রুত শক্তি পান রোজাদার মানুষ।

পুষ্টিবিদ সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ বলেন, খেজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে খেজুর ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।  

সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে খেজুর খেলে গ্যাস-অম্বল থেকে মানবদেহকে সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর খুব উপকারি বলেও জানান পুষ্টিবিদ সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৫
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।