কলকাতা: শক্ত হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং কি শুধু পুরুষের অধীনে থাকবে? কলকাতা বলছে না। এ শহর লিঙ্গ বৈষম্যকে গুরুত্ব দেয় না।
ভাই বোন মা এবং সে-সহ পরিবারে পাঁচ সদস্য তামান্নার। ২০২১ সালে বাবা মারা যান। তখন তামান্নার বয়স ছিল ২৭ বছর। সিএনজিচালক বাবাকে হারানোর পর তামান্না এখন একাই পরিবারের অর্থ উপার্জনকারী সদস্য। সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এখন তামান্নার কাঁধে। এখানেই শেষ নয়, মায়ের ধরা পড়েছে স্তন ক্যানসার। ফলে মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করার দায়িত্ব এসে পড়েছে তার ওপর।
বাবার মৃত্যুর পর জীবিকার সন্ধান করতে গিয়ে যোগাযোগ হয় দিল্লিভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আজাদ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে। সংস্থাটি মুসলিম নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকে। সেই সংস্থাই তাকে গাড়িচালকের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উবার রাইডার অ্যাপে যুক্ত করে দেয়। সংসারের দায়িত্ব এবং মায়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে বাসার কেউই আপত্তিও করেননি।
দৈনিক ১২ ঘণ্টা ডিউটির মাধ্যমে যাত্রী পরিষেবার পাশাপাশি মায়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তামান্না। এভাবেই রমজানে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন হিজাবধারী ক্যাবচালক তামান্না খাতুন। গত চার বছর ধরে কলকাতায় তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন।
‘নিজের একটা গাড়ি হবে’— এখন সেই স্বপ্নই দেখেন তামান্না। তবে সেই স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। নিজের একটা গাড়ি এখনো কিনে উঠতে পারেননি তামান্না। পরিবারের দেখভালের পাশাপাশি সেই স্বপ্নপূরণের জন্যই কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি। শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে এ কথাই বলছিলেন কলকাতার কন্যা তামান্না।
তিনি জানান, ক্যাবচালক হিসেবে বিভিন্ন সময় নানা কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে তাকে। চালকের আসনে নারীকে দেখে গাড়িতে উঠতে অনেকেই ভয় পেতেন। পুরুষের অবহেলা এবং মানুষের বাঁকা চাহনিকে পাত্তা না দিয়ে লড়াই করে চলেছেন তামান্না। তবে অনেকেই তামান্নার প্রশংসাও করেছেন।
তামান্না আরও জানান, বাবা জীবিত থাকাকালে তার উপার্জিত অর্থে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন মা। পরিবারে আর্থিক অনটনের কথা বুঝতে পেরে মাত্র ১২ বছর বয়সেই সেলাইয়ের কাজ শেখেন তামান্না। অল্পবিস্তর যা আয় হতো তা পরিবারের পেছনেই ব্যয় হতো।
তামান্নার এখন বাবা নেই, তবে অভাব আজও রয়েছে। আছে মায়ের মারণ রোগের চিকিৎসা খরচ। সঙ্গে নিজের গাড়ী কেনার স্বপ্ন। এতকিছুর পরও হাল ছাড়তে নারাজ ৩২ বছর বয়সী তামান্না খাতুন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, ১০ মার্চ ২০২৫
ভিএস/আরএইচ