কলকাতা: উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা। সোমবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ দলের চার বিধায়ককে ৩০ দিনের জন্য অধিবেশন কক্ষ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আর মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশন থেকে বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘মমতার সঙ্গে বাংলাদেশ ও কাশ্মীরের জঙ্গিদের যোগ রয়েছে। ’ এমনকি তার দাবি, ‘মমতা হিন্দুদের মুখ্যমন্ত্রী নন! সেই কারণে রাজ্যে সরস্বতী পূজা হয় পুলিশি পাহারায়। ’
এবার রাজ্যের বেশ কয়েকটি কলেজে সরস্বতী পূজা হয়েছে পুলিশি পাহারায়। এর মধ্যে ছিল মমতার সাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগেশচন্দ্র ল কলেজ। কেন পূজা পুলিশি পাহারায় হবে— মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব চেয়ে শুভেন্দু অধিকারী অধিবেশন কক্ষে কাগজ ছেঁড়েন। এ কারণেই বরখাস্ত হতে হয় তাকে।
মঙ্গলবার অবশ্য জবাব দিলেন মমতা। এদিন অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘আমাকে বলেছে, আমি নাকি হিন্দু ধর্মকে তাচ্ছিল্য করি। আর আমি মুসলিম লীগ করি। এত সংগ্রাম করার পর আমাকে এই জীবনে এসে শুনতে হচ্ছে যে, আমি জম্মু ও কাশ্মীরের এবং বাংলাদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলি! বাংলার মানুষকে বলব, যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমি একদিনের মধ্যে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। ’
এরপরই বিরোধী দলনেতাকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি বিরোধী দলনেতা হিসেবে যে অভিযোগ করেছেন, তা আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সব জানাব। এ কথা আপনি বলতে পারেন কি না? আর আমি যদি জঙ্গি হই, প্রধানমন্ত্রী আমাকে জানাবেন। ’
বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা আরও বলেন, ‘এখনো আমরা আছি বলে বাংলাদেশের আঁচ পশ্চিমবঙ্গে পড়েনি। বাংলা এখনও শান্ত আছে। এটা সর্ব ধর্মের বাংলা। আপনারা (বিজেপি) সীমান্তে গিয়ে উসকে দিয়েছিলেন। ভুলে যাবেন না, এই বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ) দেশের মধ্যে পড়ে। ফলে আমি সবটাই জানাব প্রধানমন্ত্রীকে। ’
যদিও এদিনও প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে বিতর্ক চাই না। আমি জানতে চাই, আমেরিকা থেকে ভারতীয়দের কেন শেকল পড়িয়ে পাঠানো হলো? কেন আপনি এ নিয়ে একটি কথাও বলেলেন না। আপনি তো সেখানে গিয়ে (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে) দেখা করে এলেন। ’
এদিন বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম মা সরস্বতীর পূজা শুধু হিন্দুদের পূজা নয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী যে ল কলেজে পড়েছিলেন, সেখানকার শিক্ষার্থীদের পূজার অনুমতি পেতে কেন কলকাতা হাইকোর্টে যেতে হলো? কেন পুলিশ দাঁড় করিয়ে পুজো করতে হলো? কেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাব্বির আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? এই প্রশ্নই আমাদের বিধায়করা গতকাল করেছিলেন। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা মা সরস্বতীর অপমানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) হয়েছি। এতে আমাদের দুঃখ নেই। তিনি সংবিধান মানেন না। গোটা রাজ্যে তিনি একনায়কতন্ত্র চান। গোটা বাংলাকে শেষ করে দিয়েছেন। শুভেন্দু আরও বলেন, এই মুখ্যমন্ত্রী, ২০০৫ সালে লোকসভার ডেপুটি স্পিকারকে কাগজ ছুড়ে মেরেছিলেন। ’
এ নিয়ে মমতা বলেন, ‘ওই সময় আমি তখন কাগজ ছিঁড়েছিলাম কেন? কারণ পার্লামেন্টে আমি তখন একা সংসদ সদস্য ছিলাম। আমাকে কোনো কিছু বলতে দেওয়া হতো না। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস একসঙ্গে আমাকে বলতে দিত না। সাতদিন ধরে নোটিশ দেওয়ার পরও একটা কথা বলতে দেয়নি। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় ৩৯ শতাংশ ভোট পাওয়ার পরও যখন একা হয়ে গিয়েছিলাম, আমায় একটা ভাষণ দিতে দেওয়া হতো না। সংসদে প্রশ্ন করতে দেওয়া হতো না। এরা তো রোজ বলে। আমি নিজে এদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
ভিএস/আরএইচ