ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

মিছিলে মুখরিত পশ্চিমবঙ্গ, ‘রাত দখল কর্মসূচি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৪
মিছিলে মুখরিত পশ্চিমবঙ্গ, ‘রাত দখল কর্মসূচি’

কলকাতা: সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে কীভাবে মিশে গিয়েছিল সাধারণ জনতা এবং পরবর্তী পরিণতি দেখেছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। এখন বঙ্গমুখী গোটা ভারত।

আন্দোলনে মুখরিত বাংলা। পশ্চিমবঙ্গের এক নারী মেডিকেল কলেজের ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।

বুধবার (১৪ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে আন্দোলনে নামছেন সব বয়সই বঙ্গনারীরা। যোগ দেবেন সাধারণ বঙ্গবাসী।

১১ বছর আগে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ কাণ্ড প্রকাশ্যে আসতে দেশজুড়ে উঠেছিল প্রতিবাদের ঢেউ। সমগ্র ভারতবাসীর মুখে ছিল একটাই কথা, নির্ভয়া (নাম পরিবর্তিত) মৃত্যুতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক অপরাধীদের। এমনকি সেই ভয়াবহ গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সম্পর্কিত আইনও পরিবর্তন হয়েছিল। তৎকালীন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতও তুলেছিলেন ফাঁসির দাবি। এরপর ২০২২ সালে, ৪ অপরাধীর ফাঁসি সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু, ততদিনে শীলা দীক্ষিত আর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। ওই পরিস্থিতিতে আওয়াজ উঠেছিল দিল্লিতে নারী নিরাপত্তায় শীলার প্রশাসন ব্যর্থ। ওই এক ঘটনায় দিল্লিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কংগ্রেস। ২০১৩ সালে শীলার ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটিয়েছিলেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

নির্ভয়ার ঘটনার ১১ বছর পর কলকাতার অভয়া (নাম পরিবর্তিত) কাণ্ডে ভারতজুড়ে সমালোচনার ঝড়। শুধু দেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বহু দেশের মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে কলকাতার অভয়া কাণ্ড। শুরুর দিনগুলোয় ছিল নেহাতই সাধারণ আন্দোলনের। সীমিত ছিল কলকাতায়। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় তা ক্রমশ গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রজুড়ে বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।

দল এবং পতাকাহীন সেই আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন বঙ্গবাসী। অনেক তৃণমূল নেতার পরিবারের নারী, আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠরাও সমর্থন দিচ্ছেন। এমনকি শাসক দলের বেশ কয়েকজন সাংসদ, বিধায়ক সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনের সমর্থন দিচ্ছেন। আর তাতেই যেন সিঁদুরে মেঘ দেখছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল, যা এই আবহে দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ড যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।

বুধবার (১৪ আগস্ট) রাত পোহালেই ভারতে পালন হবে স্বাধীনতা দিবস। সেই সন্ধিক্ষণে মধ্যরাত থেকে পাড়ায় পাড়ায় ‘রাত দখল কর্মসূচি’ নিয়েছেন বঙ্গনারীরা। নারীদের রাত দখলের কর্মসূচি শুরু হবে যাদবপুর এইটবি বাস স্ট্যান্ড থেকে। জানা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পতাকাহীন সেই আন্দোলনে সামিল হবে গোটা বাংলা। যারা কলকাতায় আসতে পারবেন না, তারা নিজস্ব জেলায় মিছিলে সামিল হবেন।

দিল্লির বাঙালিরা ঠিক করেছেন, ‘রাত দখলের কর্মসূচি’ তারাও পালন করবেন চিত্তরঞ্জন পার্কে। বেঙ্গালুরু শহরের টাউন হলের সামনে জমায়েত হবেন সেখানকার বাঙালিরা। ভারতের বহু জায়গায় বাঙালিরা রাত দখল পালন করবে বলে জানা যাচ্ছে। নারী আন্দোলনের পাশে আছে পুরুষরাও। ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছে অভিনেতা দেব, প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণাসহ টলিপাড়া কলাকুশলীরা। এমনকি নারীদের কথা ভেবে রাতে বাড়তি মেট্রোরেল দিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এদিন রাজপথে অভয়াকাণ্ডে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবিতে মিছিল করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও একজন নারী। ওনারও উচিত রাতের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া। এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত গ্রেপ্তার না হওয়া পর্ষন্ত আন্দোলন মিছিল চলবে। আসলে শাসক দল সবটাই জানে। দোষীদের আড়াল করতে চাইছে।

যদিও শাসকদল তৃণমূলের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, নারীদের রাত দখলের কর্মসূচিতে বাম এবং রাম যোগ রয়েছে। অর্থাৎ বাম এবং বিজেপি যৌথ মদতেই এই কর্মসূচি। এ বিষয়ে রাতের কর্মসূচির প্রধান, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রিমঝিম বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে এখন কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা নেই। আমরা সিপিএমের শাসন জানি, আমরা তৃণমূলের জমানাও দেখছি। আবার বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির কথাও জানি। ফলে কারো প্রতি আস্থা নেই।

এই আবহে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বুধবার মধ্যরাতের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তৃণমূলের কিছু নেতা সমর্থক ফেসবুকে ওই আন্দোলনের পক্ষে লেখালেখি শুরু করেছেন। যদিও প্রথম সারির কোনো নেতা এখনও সেভাবে মুখ খোলেননি। একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দোষীর ফাঁসির দাবি তুলেছেন।

প্রসঙ্গত, ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় একটি সেমিনার হল থেকে উদ্ধার করা হয় এক ছাত্রীর মরদেহ। জানা যায়, ছাত্রীটি আগের দিন রাত ২টা পর্যন্ত হাসপাতালের ওয়ার্ডে জরুরি বিভাগে ডিউটি করেন। পরে কর্মরত দুই জুনিয়র চিকিৎসকের সাথে রাতের খাওয়া শেষ করে পড়াশোনার জন্য সেমিনার হলে চলে যান। শুক্রবার সকালে সেমিনার হলের মেঝে থেকে উদ্ধার হয় তার অর্ধনগ্ন লাশ।

এ ঘটনায় এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ছাত্রদের দাবি, ঘটনার দিন আরও অনেকে ছিল। তাদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ইতোমধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে তদন্তে ভার তুলে দিয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।