চট্টগ্রাম: অন্যান্য বছরের মতো এবারও পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতেই চট্টগ্রামের অলিগলিতে সরগরম হয়ে উঠেছে ইফতার বাজার। শনিবার শেষ রাতে সেহেরি খেয়ে রোজা শুরু করেন বাংলাদেশের মানুষ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই নগরের অলিগলি থেকে অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসেছে জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু কাবাবসহ নানা চমকপ্রদ ও স্বাদের খাবারের পসরা। প্রথম রোজা তাই একটু আগেভাবেই ইফতার জন্য পছন্দের খাবার কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন রোজাদারেরা।
রোববার (২ মার্চ) দুপুরের আগে থেকে দোকানগুলোয় বিভিন্ন মুখোরোচক খাবারের পদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। বিকেল গড়াতেই শুরু হয় বেচাকেনা। চলবে ইফতারের আগ পর্যন্ত।
রোজার প্রথম দিকে সাধারণত বাসাবাড়িতে ইফতার আয়োজন থাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড় থাকে কম। কিন্তু এবার চট্টগ্রাম নগরের সে দৃশ্যপট ভিন্ন। রোজার প্রথম দিন থেকেই রমরমা নগরের ইফতার বাজার।
ইফতারের জন্য পছন্দের আইটেমটি নিতে রোজাদারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতে। রেস্টুরেন্ট ছাড়াও শহরের আনাচে-কানাচে দোকান ও ফুটপাতে ইফতার বিকিকিনিও বেশ চাঙ্গা।
ইফতারে এসব নানা পদের মধ্যে রয়েছে রেশমি জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি কাবাব, গ্রিল চিকেন, বুন্দিয়া, গরুর কালো ভুনা, কাচ্চি, মগজ ভুনা, চিংড়ি বল, পরোটা, লুচি, চিকেন তান্দুরি, চিকেন বটি কবাব, দই চিড়া। এছাড়া রয়েছে জিলাপি, ছোলা, পেঁয়াজু।
রয়েছে পেস্তা বাদাম শরবত, বেলের শরবত, তরমুজের শরবতসহ অসংখ্য পানীয়র আয়োজন। এছাড়া রোজার প্রথম দিনে ফলের প্রতিও মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। দুপুর থেকে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হতে দেখা যায় কলা, বাঙ্গি, তরমুজ, আনারস, আপেল, আঙ্গুর ও বিভিন্ন ধরনের খেজুর। ইফতারে খেজুর ও ফলের চাহিদা বেশি থাকায় এসব দোকানে বেশি ভিড় দেখা যায়।
প্রথম রমজান তাই পরিবারের সঙ্গে ইফতার করবেন ব্যবসায়ী রমজান আলী। আছরের নামাজ পড়েই বাসায় ফিরছেন তিনি। ফেরার পথে নগরের মুরাদপুর হোটেল জামান থেকে হালিম ও ইফতার সামগ্রী কিনতে এসেছেন তিনি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর প্রথম রোজায় তিনি পরিবারের সঙ্গে ইফতার করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
হোটেল জামান মুরাদপুর শাখা শতাধিক আইটেম নিয়ে ইফতার আয়োজন করেছে। ম্যানেজার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম রমজান থেকেই আমাদের হরেক রকম ইফতার সামগ্রীর আয়োজন থাকে। কাল গরু জবাই দেওয়া হবে। শুরু হবে মেজবানির আইটেম। ইফতারের নতুন সংযোজন মেজবানির মাংসের সাথে পরটা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, মুরাদপুর, জিইসি, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট, আগ্রবাদ, অক্সিজেন, ওয়াসামোড়সহ বিভিন্ন এলাকার রেস্টুরেন্টে মানুষের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা-বিক্রেতার হই-হুল্লোড়ে মুখরিত পুরো ইফতার বাজার। চলছে বেচাকেনাও। এখানকার অস্থায়ী দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে সুতি কাবাব, জালি কাবাব, টিক্কাসহ প্রায় ১০-১৫ ধরনের কাবাব। কাবাবের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ডিম চপ, পিয়াজু, চুলা, কাবাবসহ বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী। মিষ্টির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে শাহী জিলাপি, মিষ্টি, দইসহ নানা খাবার।
চকবাজারে নিয়মিত হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি বসেছে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকানও। সেসব দোকানে ছোলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ডিম চপ, দই বড়া, ডাবলির ঘুঘনি, মিষ্টি, শাহী হালিম, গরু-মুরগি-খাসির হালিম, কাবাব, সবজি পাকোড়া, মাংসের চপের পাশাপাশি অনেকে তাদের নিজস্ব বিশেষ আয়োজন নিয়ে বসেছেন।
চকবারের ভ্রাম্যমাণ দোকানি জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ন্যায় এবছরও ইফতার সামগ্রীর অস্থায়ী দোকান দিয়েছি। বাসা থেকে ইফতার সামগ্রী তৈরি করে নিয়ে আসেন তিনি। পেঁয়াজু, ছোলা, আলুর চপসহ ১২ আইটেমের ইফতার সামগ্রী রয়েছে এ দোকানে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৫
বিই/পিডি/টিসি