ঢাকা, শনিবার, ৮ চৈত্র ১৪৩১, ২২ মার্চ ২০২৫, ২১ রমজান ১৪৪৬

ভারত

বাংলাদেশিদের অভাবে জমেনি কলকাতার ঈদবাজার, মোদি-হাসিনাকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
বাংলাদেশিদের অভাবে জমেনি কলকাতার ঈদবাজার, মোদি-হাসিনাকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা 

কলকাতা: ঈদ একেবারে দোরগোড়ায়। তবে এবারে বাংলাদেশিদের অভাবে জমেনি কলকাতার নিউমার্কেটের ঈদের বাজার।

এর জন্য ব্যবসায়ীদের একাংশ দুষছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।  

অপরদিকে, আরও শোচনীয় অবস্থা কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে। ঈদেও ক্রেতাশূন্য মারকুইস স্ট্রিটের দোকানগুলো। নেই বেচাকেনা। যে কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বিক্রেতাদের। যার জেরে অনেকেই ক্ষোভ জানাচ্ছেন মোদি হাসিনার ওপর। অনেকেই বন্ধ করেছে ব্যবসা। মারকুইস স্ট্রিটে বেচাকেনার অভাবে বন্ধ হয়েছে চল্লিশটির বেশি দোকানসহ হোটেল, রেস্তোরাঁ। শুক্রবার (২১ মার্চ) এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।

সুনশান কলকাতার ঈদের বাজার

তথ্য বলছে, বাংলাদেশি না আসার কারণে বড়বাজারে বেচাকেনা কম হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কলকাতার নিউমার্কেটে এর প্রভাব পড়েছে ৬০ শতাংশ আর মারকুইস স্ট্রিট একেবারে শুয়ে পড়েছে। যার জেরে পশ্চিমবঙ্গের পড়ে যাওয়ায় অর্থনীতি এখন কীভাবে সামাল দেয় সেটাই বড় প্রশ্ন। আর এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন কলকাতার ব্যবসায়ীদের একাংশ।

অনেকেই মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদির উচিত হয়নি হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া। যার কারণে দুই দেশের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। আর তার ফল ভুগছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা।

মারকুইস স্ট্রিটের এক হিন্দিভাষী ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের মোদি সরকারের উচিত হয়নি হাসিনাকে রাখা। এটা ঠিক হয়নি। উনি যখন নিজের দেশেই থাকতে পারলেন না, তখন ভারতে আশ্রয় নিল। অন্য কোনো মুল্লুকে (দেশ) যেতে পারতেন। হিন্দুস্তানে হাসিনার থাকাটা ঠিক হয়নি। যার প্রভাব পড়েছে দুই দেশের মধ্যে। দুই দেশের বিদ্বেষে আমার জাঁতাকলে পড়েছি। ভিসা বন্ধ, বাংলাদেশি আসছে না। যার ফল ভুগতে হচ্ছে আমাদের!

বাংলাদেশিদের অভাবে কলকাতার মার্কেটগুলো ক্রেতাশূন্য প্রায়

অপর এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ, জীবন-জীবিকা কী হবে তা ভারত সরকারের হাতে। এখনও সময় আছে, ভারত ভিসা দেওয়া শুরু করলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আমি মনে করি ভিসা চালু হলে দুই দেশে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। তার ফলে আমাদের হোটেল ব্যবসায় টিকে থাকতে পারব। তিনি জানান, মারকুইস স্ট্রিটে হোটেল, দোকান, রেস্তোরাঁ মিলিয়ে ৪০ টির বেশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

একইভাবে ছন্দপতন ঘটেছে যাত্রীবাহী বাস পরিষেবায়। ঈদ মৌসুমে দুই দেশের বাস চলাচল না করায় বাসমালিকসহ পরিবহন খাতের সকলের মাথায় বাজ পড়েছে। যে কারণে কলকাতার সেন্টমার্টিন পরিবহন পরিষেবা ব্যবসায় বদল এনেছে। সেন্টমার্টিন পরিবহন পরিষেবা কাউন্টার এখন থ্রি পিসের দোকান। সব মিলিয়ে মারকুইস স্ট্রিটের প্রায় ৫ হাজার জনের বেশি জীবিকা হারিয়েছেন। গোটা মারকুইস স্ট্রিট অঞ্চল এক প্রকার সুনশান, যেন শ্মশানে পরিণত হয়েছে।

এভাবেই ক্রেতা না পেয়ে অলস সময় পার করছেন কলকাতার দোকানিরা

ভারতের ভিসানীতিতে জটিলতার কারণে মারকুইস স্ট্রিটে যখন এই চিত্র সামনে এসেছে। তখন স্থানীয়দের কারণে কলকাতার নিউমার্কেটের বেচাকেনা কিছুটা সচল রয়েছে। তবে ছোট এবং ফুটপাতের দোকানপাটে সেভাবে বেচাকেনা নেই। তাদের অভিমত, একে তো বাংলাদেশি নেই, তার ওপর স্থানীয়রা অনলাইন শপিং - এ মজেছেন।

নিউমার্কেটের এক কসমেটিকে দোকানি বলেন, গত বছর এই সময় বেচাকেনার কারণে চোখের পাতা এক করতে পারিনি। আর এবার, এক প্রকার মাছি তাড়াচ্ছি। তিনি জানান, বাংলাদেশি আসছে না, তাই বাজার নেই। বাজার খুব খারাপ। মার্কেট ঘুরে দেখুন কয়েকটা বড় দোকান ছাড়া পুরো নিউমার্কেট ফাঁকা।

ওই অঞ্চলে বড় এবং বিখ্যাত থ্রিপিসে দোকান ‘মিলন’। তার ম্যানেজার বলেন, বাংলাদেশিদের অভাবে বেচাকেনা যে কিছুটা কম হবে তা আমরা রোজার আগেই টের পেয়েছিলাম। এখন আমাদের বড় ভরসা স্থানীয় ক্রেতারা। তারাই সম্ভবত এবার আমাদের বাঁচিয়ে দেবে। তবে আগামীতে কি হবে জানি না। মনেপ্রাণে চাই ভিসা চালু হোক, আগের মত খুলে যাক বর্ডার।

অপরদিকে, কলকাতার বড়বাজার মন্দের ভালো। সেখানে এক গুজরাটি ব্যবসায়ী বলেন, ৫ আগস্টের পরই আমরা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম ব্যবসায়ে ঘাটতি হবে। গত বছর ওই সময় যাদের পুরোনো ভিসা ছিল, তারা বাংলাদেশে মাল নিয়ে গিয়েছিল। এ বছর শুরু থেকে ভিসা না পাওয়ার কারণে তারা আসতে পারেনি। যার কারণে এবারে ঈদে ৩০ শতাংশ কম বেচাকেনা হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বড়সড় না হলেও এর প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে। বড়বাজারে যদি বেচাকেনা ৩০ শতাংশ এবং নিউমার্কেটে ৬০ শতাংশ বেচাকেনা কম হয়, তাহলে, পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারে পড়বেই।  

অর্থনীতিবিদ সন্দীপের অভিমত, এখনই কিছু বলা যাবে না। কতটা প্রভাব পড়বে, তা আগামীতে বোঝা যাবে।

অন্যদিকে রাজনীতিবিদরা মনে করছেন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলেরও কোনো চাল হতে পারে। কারণ, বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট। বাংলার অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হলে অবশ্যই বিরোধীদের লাভ। ফলে মমতার সরকার কীভাবে এর মোকাবিলা করে সেটাই এখন দেখার।

জানা যায়, কলকাতার মারকুইস স্ট্রিট- ফ্রিস্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে সার্বিক বিষয়ে জানানো হয়েছে। যদিও ওয়েলফেয়ার সোসাইটির অভিমত, রাজ্য সরকারের এখানে কিছুই করার নেই। কেন্দ্র যদি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে কারোই কিছু করার নেই। ফলে সব মিলিয়ে কলকাতায় ঈদ আছে, কিন্তু ঈদের বাজার নেই। বাংলাদেশিদের অভাবে যেন একপ্রকার  জৌলুস হারিয়েছে কলকাতা।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
ভিএস/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।