হবিগঞ্জ: দেও টান হেঁইয়া, আরও জোরো হেঁইয়া, শাবাশ জোয়ান হেঁইয়া-এমন করে বাঁশের ভেলায় শুঁটকি নদী পারাপার চলছে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। যদিও আধুনিক যুগে এই বাহন অনেকের কাছে শখের বস্তু।
বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হবিগঞ্জের বানিয়াচং। এর অভ্যন্তরে দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নে ছোট-ছোট গ্রামের সংখ্যা ২১টি। প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস, যাদের অধিকাংশেরই পেশা কৃষি। প্রতিদিন প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয় ফসলী জমিতে। মাঝপথে শুঁটকি নদীতে সেতু না থাকায় বাঁশের তৈরি ভেলা দিয়ে পারাপার হতে হয়।

নামটা বিঘুটে হলেও শুঁটকি নদীর শীর্ণ ধারা দেখতে দারুণ লাগে। শুকনো মৌসুমে এ নদীর পানি যত কমে এর রূপ আর গুণ ততই বাড়ে। গৃহস্থর হাতের গবাদিপশুই হোক বা জেলেদের হাতে মাছ ধরা; প্রতিদিনের জীবনধারায় এ নদী জড়িয়ে আছে নিবিড় মমতায়।

ফারুক আহমেদ নামে একজন বাংলানিউজকে জানান, সেতু নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবছর একটি করে বাঁশের ভেলা বানিয়ে নদী পারাপার হন। কৃষকদের ফসলী জমিতে যাওয়া-আসার পথে এ দুর্ভোগ চলছে প্রায় ৫০ বছর ধরে।
রাখাল আক্তার মিয়া বাংলানিউজকে জানান, গরুর দল নদীতে নামিয়ে ভেলা দিয়ে পার হতে হয় তাদেরকে। কিন্তু মানুষ ওপারে পৌঁছার আগেই গরুগুলো পার হয়ে গিয়ে জমির ধান খাওয়া শুরু করে। যে কারণে প্রতিদিনই ধানী জমির মালিকদের সঙ্গে রাখাল ছেলেদের বিতণ্ডা হয়।

ভেলা তৈরির সঙ্গে জড়িতরা জানান, এটি বানাতে তাদের ব্যয় হয় প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা। যা স্থানীয় কৃষকদের সমিতি থেকে দেওয়া হচ্ছে। তবে কাউকে কোনো মজুরি দিতে হয় না। প্রতি ঘর থেকে একজন করে গিয়ে দুইদিন ধরে উৎসবমুখর পরিবেশ কাজ করেন তারা। ভেলাতে একেকবার পার হতে ১৫ থেকে ২০ জন উঠতে পারেন। সঙ্গে কিছু মালামালও। রশি টানের মাধ্যমে এপার-ওপার দিন-রাত আসা যাওয়া করতে থাকে ভেলা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
এএটি