ঢাকা, শুক্রবার, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৬ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

মুরগির এক ডিমের ওজন ১৮০ গ্রাম, বিস্মিত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৫
মুরগির এক ডিমের ওজন ১৮০ গ্রাম, বিস্মিত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা  

নাটোর: মুরগির ডিমের ওজনের হয় সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম। সেখানে একটি মুরগি ডিম পেড়েছে ১৮০ গ্রাম ওজনের।

যার আকারও স্বাভাবিক ডিমের তুলনায় প্রায় চারগুণ বড়। ডিমটির গঠনও স্বাভাবিকের তুলনায় ভিন্ন। এর খোলস মসৃণ না, বরং কিছুটা অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে। ফলে প্রথমে খামার মালিক ডিমটি মুরগির বলে বিশ্বাস করতে পারেননি।

তাই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। আর এ বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলে ওই ডিম দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক মানুষ। এমন ডিম দেখে প্রাণিসম্পদ কর্মকতাসহ সংশ্লিষ্টরা বিস্মিত হয়েছেন। শুধু তাই নয় এ ডিমটি নিয়ে এখন গবেষণার কথা ভাবছেন তারা।

বুধবার (৫ মার্চ) সকালের দিকে নাটোরের লালপুর ঈশ্বরদী ইউনিয়নের ভাটাপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াজেদ সরদারের ছেলে গোলাম কিবরিয়ার খামারে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকাল থেকেই সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেসবুকে ঝড় বয়ে যাচ্ছে । একটি ডিমকে ঘিরে ওই এলাকার মানুষজন বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠেন।

খামারমালিক গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে নিজ বাড়িতে লেয়ার মুরগির একটি খামার গড়ে তোলেন তিনি। এক মাস ধরে মুরগিগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে। প্রতিদিনের সতো বুধবার সকালে খামারে গিয়ে একটি খাঁচায় অস্বাভাবিক বড় একটি ডিম দেখতে পান তার মা। প্রথম দিকে তার মা ডিমটি দেখে ভয় পেয়ে যান। পরে ঘটনাটি পরিবারের অন্য সদস্যদের জানালে তারাও ডিমটি দেখে বিস্মিত হন। কিন্তু কেউ ভয়ে ডিমে হাত দেননি। কারণ ডিমের খোলস মসৃণ না, বরং কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল।

পরে দুপুরের দিকে তিনি নিজে ডিমটি সংগ্রহ করে খামার থেকে বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্রে ওজন করে দেখতে পান, ডিমটির ওজন প্রায় ১৮০ গ্রাম। বিষয়টি তিনি মোবাইল ফোনে স্থানীয় এক পশু চিকিৎসককে খুলে বলেন। তিনিও  ডিমটির কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারেননি। পরে তিনি নিজেই এসে ডিম দেখে হতবাক হোন। এরপর থেকে বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।  

আশপাশের মানুষ ডিম দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করতে থাকে, অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। কেউ কেউ এ ডিমকে সাপের ডিম হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত মুরগির ডিম হিসেবেই সবাই দাবি করেন এবং ঘটনাটি বিরল বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, কোন মুরগি এ ডিমটি দিয়েছে, সেটা শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে এ ঘটনার আগে এবং পড়ে আর এমন ডিম পাওয়া যায়নি।

গোলাম কিবরিয়ার মা মোছা. মমতাজ বেগমের (৫৯) জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে যখন ডিম তোলার জন্য খামারে যান। তখন তিনি সেখানে একটি খাঁচায় অন্যান্য ডিমের সঙ্গে একটি বড় ডিম দেখতে পান। প্রথমে ডিমটি দেখে ভয় পেয়েছিলেন, পরে বিষয়টি স্বাভাবিক হলে ঘটনাটি পরিবারের অন্যদের জানান। পরে তার ছেলে এসে ডিমটি সংগ্রহ করে ওজন করে দেখেন ওজন ১৮০ গ্রাম। তিনি বলেন, এমন বড় ডিম আগে কখনও দেখেননি।

প্রতিবেশী সাবিনা ইয়াসমিন ও হারুনর রশিদ জানান, এত বড় মুরগির ডিম তাঁরা আগে কখনো দেখেননি। সাধারণ ডিমের তুলনায় এটি প্রায় চার গুণ বড়। পাশাপাশি ডিমটির গঠনও স্বাভাবিকের তুলনায় ভিন্ন। এর খোলস মসৃণ না, বরং কিছুটা অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে। তবে রং অন্য ডিমের মতোই। বিষয়টি সত্যিই অদ্ভুদ এবং বিরল ঘটনা।

সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, কোন মুরগি ডিমটি পেড়েছে, তা জানার খুব ইচ্ছা হচ্ছে তার। খামারি বিক্রি করতে রাজি হলে আমি ডিমদাতা মুরগিটি যেকোনো মূল্যে কিনতে রাজি আছি। কিন্তু খামারি ডিমটিও বিক্রি করতে রাজি হননি। আবার এমন আকৃতির ডিম পাড়বে কি না, তা জানার আগ্রহে আমরা অপেক্ষা করছি। যদি পাওয়া যায়, তাহলে যে দামেই হোক তিনি তা কিনবেন।

ভাটপাড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ইলিয়াস হোসেন (৮০) জানান, ডিমের ওজন ও আকৃতি দেখে তিনি অবাক হয়েছেন। কারণ, তার জীবদ্দশায় এত বড় ডিম আগে কখনো দেখেননি। খামার মালিক ডিম বিক্রি করতে রাজি হলে তিনি তা কিনবেন। তবে ডিমটি কোন মুরগি পেড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মুরগিটিকে চিহ্নিত করা গেলে সেটিকেও কিনতে চান তিনি।

লালপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, আগে কখনো এত বড় ডিম তিনি দেখেননি। কোনো মুরগি অনিয়মিত ডিম দিলে তার ডিমে একাধিক কুসুম থাকতে পারে, যার ফলে ওজন ৮০-১০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। তবে ১৮০ গ্রাম ওজনের ডিম পাওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা।  

তিনি বলেন, সাধারণত একটি লেয়ার মুরগির ডিম ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম হয়ে থাকে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম ঘটনা। তার চাকরিজীবনে মুরগির এত বড় ডিমের কথা এ প্রথম শুনলেন এবং দেখলেন।

তিনি আরও বলেন, অস্বাভাবিক আকারের এ ডিম নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন। আবার কেউ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডিমের গঠন নিয়ে গবেষণার কথা বলছেন। তাই এটি নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই খামার মালিককে এ ডিমটি আপাতত সংরক্ষণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৫
জেএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।