ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ১১ মার্চ ২০২৫, ১০ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

কালো বোরো ধানেই স্বপ্ন বুনছেন যমুনা পাড়ের কৃষক

বেলাল হোসেন ও রফিকুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬
কালো বোরো ধানেই স্বপ্ন বুনছেন যমুনা পাড়ের কৃষক ছবি: আরিফ জাহান/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: যমুনার বুক এখন অনেকটা পানি শূন্য। চারদিকে শুধু ধু-ধু বালুচর।

যেন রাজ্যের পিনপতন নিরবতা। দু’কূলজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল ঢালুচর। সেই চরই যমুনা পাড়ের মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন।
 
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা ও বাঙালি নদীর ঢালুচরে আগাম জাতের কালো (স্থানীয় ভাষায় কালি) বোরো ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এ ধান উৎপাদনে জমিতে হালচাষের প্রয়োজন হয় না, রাসয়নিক সারও তেমন লাগে না। ফলে খরচও অনেক কম। তাই এ ধান উৎপাদনে যমুনা পাড়ের বাসিন্দাদের বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই ধান চাষে আগ্রহ ও স্বপ্নের কথাই জানা যায়।
 
স্থানীয় কৃষক জামাল উদ্দিন ও মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, যমুনা ও বাঙালি নদীর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমন মৌসুমে চাষিরা গাইঞ্জা ধান (স্থানীয় নাম) চাষ করে থাকেন। পৌষ মাসে এ জাতের ধান কাটা ও মাড়াই হয়। কিন্তু চরাঞ্চলের চাষিরা গাইঞ্জা ধান কাটার আগেই কার্তিক মাসের প্রথমদিকে কালো (কালি) বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেন। চারাগাছের বয়স ২৫-৩০ দিন হলে চাষিরা নদীর ঢালুচরে বিনাচাষে সেই চারা রোপণ করেন।

উপজেলা কৃষি অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে কালো বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে। নদীর পানির কাছে ঢালুচরের নরম পলিমাটিতে বোরো ধান লাগানো হয়।

কুড়িপাড়া চরের কৃষক জালাল উদ্দিন ও দিঘাপাড়া চরের কৃষক এফাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, নদীর পানির কাছাকাছি চারা রোপণ করায় হাত সেচ তেমন লাগে না। মাটিভেদে কয়েকবার নদী থেকে পানি সেচ দিলে ধান চাষের উৎপাদন বাড়ে। সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিলেই চলে।

চৈত্র মাসে যমুনাতে পাহাড়ি ঢল নামার আগেই ধানের শীষ ভরা সেই বোরো ধান কাটা হয়। তবে ভয়ও আছে। ওই সময় আগাম ঢল (বৃষ্টি) হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাতে পানিতে পাকা ধান তলিয়ে যায়। এতে চাষিদের তেমন কিছুই করার থাকে না।

প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় ৭-৮ মণ এ জাতের ধানের ফলন পাওয়া যায় বলেও জানান কৃষকরা।

দিঘাপাড়া গ্রামের চাষি এফাজ উদ্দিন মেম্বার বাংলানিউজকে জানান, স্বল্প খরচে কালো বোরো জাতের ধান চাষ করা যায়। পাশাপাশি অসময়ে ফসল আসায় কৃষকের বেশ উপকার হয়। আবার ধান বাদে গাছগুলো গো-খাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করা যায়। দামও বেশ ভালোই পাওয়া যায়।

সবমিলে কালো বোরো ফসল চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদই বলেই জানান তিনি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিনাচাষে অল্প ব্যয়ে কালো বোরো জাতের ধান চাষ করতে পারেন কৃষকরা। প্রতি বিঘায় প্রায় ৭-৮ মণ হারে ফলন হয় এ ধানের। অসময়ে ফসল ঘরে আসায় চরাঞ্চলের কৃষক বেশ উপকৃত হন।

প্রতিবছর চরাঞ্চলে এই ধান চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে বলেও জানান এই এই কৃষি কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
এমবিএইচ/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।