ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৫ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

তথ্য কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৫
তথ্য কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব

ঢাকা: তথ্য অধিকার আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন নিশ্চিত করতে তথ্য কমিশনকে স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দিয়েছে তথ্য অধিকার ফোরাম।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে তথ্য কমিশনের কার্যকারিতা ও তথ্য অধিকার আইনের সংশোধনী বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেয় সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পটভূমিতে সেপ্টেম্বর মাস থেকে তথ্য অধিকার আইনের মূল পরিচালন সংস্থা তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের অনুপস্থিতিতে কমিশনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। একইসঙ্গে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে এ আইনের সুফল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনের সংশোধনও জরুরি হয়ে পড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য অধিকার আইনের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই)-এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান।

তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো তথা প্রতিটি কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাস করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশে গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য তথ্য কমিশন যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসব উদ্দেশ্য অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য কমিশনকে একটি সাংবিধানিক স্বাধীন সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, আপীল কর্তৃপক্ষ চিহ্নিতকরণে আবেদনকারীদের অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে তা সহজতর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি আইনের প্রস্তাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা স্থানীয় সরকার’ শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সরকারের অংশীদারিত্ব রয়েছে এমন সব প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

তথ্য অধিকার আইনের সংশোধনের প্রস্তাবনায় তিনি আরও বলেন, সরকারের কতিপয় মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত বা অধীনস্থ কোনো অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের আওতাধীন ‘ইউনিয়ন কার্যালয়’ থাকায় এ কার্যালয়গুলোকে ‘তথ্য প্রদান ইউনিট’ হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করার প্রয়োজন। নথির নোট সিট পর্যালোচনা করার মাধ্যমেই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নথি পরিচালনাকারী প্রত্যেক কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে, কী ভূমিকা পালন করেছেন তা স্পষ্ট বুঝা যায়। কাজেই নোটশিটকে তথ্যের সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

এছাড়া তথ্য অধিকার আইনে জরিমানার হার বৃদ্ধিসহ আরও বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে তথ্য অধিকার ফোরাম।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তথ্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমরা খুব উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, গত কয়েক মাস ধরে তথ্য কমিশন অকার্যকর হয়ে আছে। আমরা বিভিন্ন ফোরামে বারবার এ বিষয়ে কথা বলার পরেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এ বিষয়ে কোনো উৎসাহ নেই। এটি আমাদের একদিকে যেমন অবাক করছে, তেমনি উদ্বেগও বাড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে যে তথ্য অধিকার আইন করা হয়েছে, এটার কিছু সংস্কার করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তথ্য কমিশন কোনোদিন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। আমরা চাই এটি নির্বাচন কমিশনের মতো একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা হোক। তাহলে এ কমিশন জোরালো কমিশন হবে। তাহলে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আরও বাড়বে।

এ সময় তথ্য অধিকার আইনে রাজনৈতিক দলগুলোকেও যুক্ত করার প্রস্তাব দেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর অধীনে আনা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল সংবিধান স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক দলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকেও রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল যদি স্বচ্ছ ও জবাবদিহি না হয়, তাহলে অতীতে যা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, সেভাবে কেন তথ্য কমিশন গঠন হলো না সেটার জবাব সরকারকে দিতে হবে। আমরা মনে করি, অনতিবিলম্বে সে কাজটা সরকারের পালন করা উচিত।

তথ্য কমিশনের সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তথ্য কমিশন একটি পর্যায়ে এসে দলীয় ক্যাডার দিয়ে পরিচালিত হয়েছে। এর নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিলেন দলীয় ক্যাডাররা। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সেই অবস্থা হবে এটা আমরা আশা করি। কিন্তু এর পাশাপাশি একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, এমন ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, যারা পেশাগত জীবনে তথ্য প্রকাশের পরিপন্থি অবস্থান পালন করেছেন। সেটি যদি করা হয়, তাহলে তথ্য কমিশনের মূল উদ্দেশ্য লঙ্ঘিত হবে, ব্যর্থ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৫
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।