ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিরামপুরে আধা কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে রক্তের ফোঁটার রহস্য উন্মোচন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
বিরামপুরে আধা কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে রক্তের ফোঁটার রহস্য উন্মোচন 

দিনাজপুরের বিরামপুরে আধা কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে রক্তের ফোঁটা, ভুট্টা ক্ষেতের পাশে থাকা রক্ত মাখা লাঠি, পেট্রল, রশি ও মোবাইল ফোনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।  

মোবাইল ফোনে থাকা সিমের মালিক এক নারীর পরিচয় শনাক্তের পর এ রহস্যের জট খুলতে শুরু করে।

প্রথম দিকে এটি একটি হত্যাকাণ্ড ধারণা করলেও এটি ছিল মাদক সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কারণে মারধরের ঘটনা।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাইদুল ইসলাম (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় বিরামপুর উপজেলার জোতবানী গ্রামের মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে বুলবুল আহমেদ আহত হয়েছেন। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। আহত বুলবুল ব্যবসায়ী সাইদুলের দূরসম্পর্কের মামা বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

সাইদুল উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দামারপাড়া গ্রামের হেসাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৭ বছর ধরে উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সাইদুল উপজেলার কাটলা বাজারের একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী। এ ছাড়া সাইদুল মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।  

আহত বুলবুল জানান, শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে সাইদুল মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তাকে কাটলা বাজারে যেতে বলেন। পরে সন্ধ্যায় বুলবুল কাটলা বাজারে গেলে সাইদুল দোকান বন্ধ করে আসছি বলে বুলবুলকে ওই বাজারের পূর্ব পাশে ছোট যমুনা নদীর ব্রিজের ওপরে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে রাত ৮টার দিকে সাইদুল ব্রিজে গিয়ে বুলবুলকে নিয়ে উপজেলার মির্জাপুর মণ্ডব এলাকায় যান। সেখানে সাইদুল মোবাইল ফোনে একজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে তাকে আবারও কাটলা বাজারে নিয়ে আসেন সাইদুল। এরপর বাজার থেকে বুলবুলকে সাইকেলে তুলে নিয়ে দক্ষিণ মাধুপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত একটি মাহফিলে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বুলবুলকে নিয়ে মাহফিলের অবস্থান থেকে পশ্চিমে প্রায় ৪০০ গজ দূরে একটি ভুট্টাক্ষেতে যান সাইদুল। একপর্যয়ে সেখানে বাঁশের লাঠি দিয়ে বুলবুলের মাথায় আঘাত করেন সাইদুল।  

এ সময় বুলবুল নিজেকে রক্ষা করতে সাইদুলের দুই হাতের আঙুলসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড় দেন। দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা ভুট্টাক্ষেতের মধ্যে দুজনের মারামারি হয়। পরে একসময় বুলবুল সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে যান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভুট্টাক্ষেত থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোনে থাকা সিমের মালিকের নাম-পরিচয় যাচাই করে উপজেলার জোতবানী গ্রামের বুলবুলি বেগম নামের একজনের নামে নিবন্ধন রয়েছে বলে শনাক্ত করে পুলিশ। ওই দিন বিকেলে পুলিশ বুলবুলির বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে বুলবুল আহমেদকে আহত ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় পান। পরে পুলিশ বুলবুলকে আহত হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ঘটনার বিস্তারিত জানান।

এ বিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, সাইদুল ও বুলবুলের মধ্যে হয়ত মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে আগে থেকে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই সূত্র ধরে শুক্রবার রাতে বুলবুলকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ভুট্টাক্ষেতে ডেকে নিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন সাইদুল। তবে দুজনেই এখনও পুরোপুরি সত্য কথা বলেননি বলে মনে হচ্ছে। সেই সঙ্গে তদন্তও চলছে। সাইদুলকে রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।