ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার কারণ যা জানা গেল

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার কারণ যা জানা গেল মেঘনায় ভেসে উঠছে মরা ছোট মাছ

চাঁদপুর: পদ্মা-মেঘনায় শীত মৌসুমের এই সময়ে পানি কম থাকে। ইলিশের প্রাপ্যতা কম থাকায় অধিকাংশ জেলে বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ ফাঁদ পেতে ছোট মাছ শিকার করেন।

যার ফলে মারা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছসহ জলজ অনেক প্রাণী।  

স্থানীয়দের দাবি, মাছ ধরতে বিষ প্রয়োগে হচ্ছে নদীতে। এসব কারণ বের করতে নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করছে গবেষকরা। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে অবৈধ জালের ব্যবহারই নদীতে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

মৎস্য বৈজ্ঞানিক ও পরিবেশ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদপুর নৌ সীমানাসহ মেঘনার ওপরের অংশে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের দিকে কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত নদীর পানি জলজ প্রাণীর প্রায় অনুকূলে। গেল বছর নদীতে এমন দূষণের সময় মৎস্য বৈজ্ঞানিকরা পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। তখন দূষণের মাত্রা তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়।

গত কয়েকদিন মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে শুরু করে মোহনপুর পর্যন্ত মেঘনা নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত নৌকা ছোট ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরার কাজ করছে। তবে তারা দিনের চাইতে রাতেই এসব মাছ বেশি ধরে। গত এক সপ্তাহে মেঘনার ওপরের অংশ অর্থাৎ ষাটনলের উজানে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় জেলেদের জালে ধরা পড়া খাওয়ার অনুপযোগী মাছ নদী থেকে মরে তীরে ভেসে ওঠে। যার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তবে নিষিদ্ধ ফাঁদ ব্যবহারকেই এই মাছ মরে ভেসে ওঠার কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় জেলেরা।

ষাটনল এলাকার বাসিন্দা ছামাদ প্রধানিয়া বলেন, মাছ ধরার জন্য নদীতে সরাসরি বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব বিষক্রিয়ার কারণে ছোট মাছসহ অনেক জলজ প্রাণী মরে পাড়ে ভেসে উঠছে।

মোহনপুর এলাকার জেলে বাবুল ও লতিফ মিয়া বলেন, এই সময়ে অধিক পরিমাণ অবৈধ ও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কারণে মাছ মরে যাচ্ছে। বড় ফাঁদে এই ধরনের ছোট মাছ ধরাও পড়ে না এবং মরার প্রশ্ন আসে না।

পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, কিছু অসাধু জেলে রয়েছে যারা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ও অবৈধ মশারি জাল ব্যবহার করে নদীতে মাছ শিকার করে। আর ওই জালে নিচের অংশে ছোট ফাঁস থাকায় কোনো রেনুপোনা বের হতে পারে না। যে কারণে খাওয়ার অযোগ্য ওই মাছগুলো নদীতেই ফেলে দেন জেলেরা। সম্প্রতি নদীতে কয়েক স্থানে যেসব মাছ ভেসে উঠছে সেগুলোই এই মাছ।

পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা গবেষণাগারের সিনিয়র কেমিস্ট মাসুদ রানা বলেন, নদীতে বিষপ্রয়োগ ও পানির প্রকৃত অবস্থান জানতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণাগারে নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে এর প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার দিদার বলেন, কলকারখানার বর্জ্য সারা বছর জুড়ে নদীতে আসে না। বছরের শেষের দিকে কোনো সময় তারা এসব বর্জ্য নদীতে একবারে অপসারণ করে। তখন পানির মধ্যে অক্সিজেন সমস্যা দেখা দিতে পারে। গত বছর এমন পরিস্থিতি হওয়ার পর আমরা ষাটনল এলাকায় গিয়ে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং অ্যামোনিয়ার মাত্রা জিরোর স্থলে ওয়ান ভাগ পেয়েছি। এবছরও পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।