ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৫ দশক ধরে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির, সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
৫ দশক ধরে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির, সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন

মৌলভীবাজার: দুই ধর্মীয় উপাসনালয়ের পাশাপাশি অবস্থান। একটিতে আজান হলে অপরটিতে চলে নীরব পূজার্চনা।

 ধর্মপ্রাণ স্থানীয় মুসলিম অধিবাসী এবং ধর্মপ্রাণ সনাতন সম্প্রদায়ের ভক্তরা এভাবেই পাশাপাশি উপাসনালয় ঘিরে নিজেদের ধর্ম পালন করে আসছেন বহুদিন ধরে।

তাতে নেই কোনো বিভেদ, সংঘাত বা মনোমালিন্য। বরং রয়েছে সহানুভূতিশীলতা, উদারতা আর ভ্রাতৃত্ব।  

১৯৭৩ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে পাশাপাশি নির্মাণ করা হয় মসজিদ ও মন্দির। আজান শুনে এলাকার মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসেন এ মসজিদে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা–অর্চনা চলে পাশের মন্দিরে। এভাবেই চলে আসছে পাঁচ দশক ধরে।

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন নিয়ে কখনো বিরোধ হয়নি দুই ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে। বরং দাঁড়িয়ে আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাক্ষী হয়ে, সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন রূপে।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নে উপাসনালয় দুটির অবস্থান। ওই ইউনিয়নের জুড়ী-কুলাউড়া সড়কের ভূঁয়াই বাজার এলাকায় এক পাশে ‘ভূঁয়াই বাজার জামে মসজিদ’। এর মাত্র ৩০-৪০ ফুট দূরে ‘ভূঁয়াই বাজার সর্বজনীন দুর্গা মন্দির’।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, স্থাপনা দুটি নির্মাণ করা হয়েছে একই সময়ে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর ভূঁয়াই বাজার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এলাকাবাসী। এ সময় মসজিদ ও মন্দিরের জন্য পাশাপাশি সাত শতাংশ করে জমি রাখা হয়। ১৯৭৩ সালের দিকে ওই জমিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ছনের চালা দিয়ে দুটি স্থাপনা গড়ে ওঠে। এরপর পাকা স্থাপনা নির্মিত হয়।

মন্দির কমিটির সভাপতি পীযূষ কান্তি দাশ বলেন, প্রায় ৫০ বছর আগে এলাকাবাসীর উদ্যোগে একইসঙ্গে মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ করা হয়। এ রকম পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির আর কোথাও আছে কি না, জানা নেই। এখানকার হিন্দু-মুসলমানরা মিলেমিশে বসবাস করছে। কোনো হিংসা-বিদ্বেষের ঘটনা ঘটেনি। মন্দিরে পূজার সময় মুসলমান ভাইদের নিমন্ত্রণ করি, তারা আসেন, নানাভাবে সহযোগিতাও করেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা নিয়ে আমাদের মধ্যে কখনো বিরোধ বা সংঘাত হয়নি।

মসজিদে নামাজ আদায় করে বেরোনোর পথে কথা হয় মাসুক মিয়া, জায়েদ মিয়াসহ কয়েকজন মুসল্লির সঙ্গে। তারা বলেন, মন্দিরে পূজা চলে। মসজিদে নামাজ আদায় করি আমরা। এতে কারও কোনো সমস্যা হয় না। এটা আমাদের বহু দিনের ঐতিহ্য।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবলু সূত্রধর বাংলানিউজকে বলেন, ভূঁয়াইবাজার জামে মসজিদ এবং ভূঁয়াইবাজার সর্বজনীন দুর্গা মন্দির ৫০ বছর ধরে এ এলাকায় ধর্মীয় সম্প্রীতির সাক্ষী হয়ে রয়েছে। কখনো কোনো দ্বন্দ্ব বা হানাহানির ঘটনা ঘটেনি। এখানে মানুষে-মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি অটুট বন্ধন রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
বিবিবি/এসএএইচ                              
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।