ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্যালিগ্রাফিতে ফিলিস্তিনির ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্যালিগ্রাফিতে ফিলিস্তিনির ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের বর্বরতা যেমন কাঁদায় গোটা বিশ্বকে। তেমনি এর প্রতিবাদও হয় নানাভাবে।

কখনও বিক্ষোভ মিছিল বা কখনও সমাবেশ করে বর্বরতা বন্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে প্রতিবাদের ভাষা।  

তবে এবার রং তুলির আঁচড়ে অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নির্মম নির্যাতন ও বর্বরতার চিত্র জীবন্ত হয়ে ফুঁটে উঠেছে। তুফান নামের সেই ক্যালিগ্রাফি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করলেই ব্যক্তিগত পেইজ ও গ্রুপের আইডি থেকে পোস্ট করা হচ্ছে চিত্রটি। এতে বেশ প্রশংসায় ভাসছে ক্যালি গ্রাফিতিটির চিত্র শিল্পীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যালিগ্রাফিতি আঁকা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুরাতন পাওয়ার হাউজ ভবনে। এলাকাটি শিমরাইলকান্দি ‘পাওয়ার হাউজ রোড’ হিসেবে বেশ পরিচিতি। ‘তুফান’ নামক এই ক্যালিগ্রাফিটি এঁকেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফরিদপুর জেলার দুজন যুবক।  

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. ওমর ফারুক ও ফরিদপুরের উসাইদ মুহাম্মদ। তারা দুজনই মাদরাসার ছাত্র। মো. ওমর ফারুক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার তাকমিল জামাত বিভাগে অধ্যায়নরত এবং উসাইদ মুহাম্মদ ঢাকার লালবাগের একটি মাদরাসার থেকে তাকমিল ফিল হাদিস (মাস্টার্স) বিভাগ শেষ করে বর্তমানে এশিয়াটিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে অধ্যয়নরত আছেন।  

এই ক্যালিগ্রাফিটি অঙ্কন করতে তাদের সাত দিন সময় লেগেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা কাজ করা হয়েছে। তবে ‘তুফান’ অঙ্কনের শেষ দুই দিন সারারাত কাজ করেছেন তারা। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে পরের দিন ভোর ৬টা অবধি কাজ করে গত ১০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় ক্যালিগ্রাফিতি ‘তুফান’ এর কাজ শেষ করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর চিত্র কর্মটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ক্যালিগ্রাফিটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভিড় করছেন।  

স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা জানায়, এটি কেবল চিত্র কর্ম নয়, এটি ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। রং তুলির আঁচড়েও যে প্রতিবাদের ভাষা এমন তীব্র হতে পারে তা এই চিত্র কর্মটি না দেখলে বোঝা যাবে না।  

তারা বলেন, অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর এত নির্যাতন। মুসলিমদের প্রথম কিবলা আল আকসা মসজিদে দখল করে নেওয়া তারপরও বিশ্ব বিবেক ঘুমিয়ে আছে। আমরা মনে করি চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। যারা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এই ক্যালিগ্রাফিটি করেছেন তাদের সাধুবাদ জানাই। তাদের এই কাজ সফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিল।  

ক্যালিগ্রাফিটির চিত্র শিল্পী মো. ওমর ফারুক জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশে ছাড়ার পর সারাদেশেই দেয়ালে দেয়ালে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে প্রতিবাদের চিত্র তুলা ধরা হচ্ছিল। তেমনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে বেশ কয়েকটি ক্যালিগ্রাফিতী এঁকেছেন। তার চিত্রাঙ্কনের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে ছিল ফরিদপুরের উসাইদ মুহাম্মদ। তিনি এবং তার সঙ্গী উসাইদ মুহাম্মদ চিন্তা করেন নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে কিছু একটা করার। সেই চিন্তা থেকেই তারা পাওয়ার হাউস ভবনে ক্যালিগ্রাফিটি অঙ্কনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতা তারা এটির কাজ শেষ করেন।  

তিনি আরও জানান, যেহেতু আমরা শিল্পী আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের অবস্থান থেকে কিছু একটা করার। ক্যালিগ্রাফিটিতে ফিলিস্তিনের ধ্বংস প্রায় শহর এবং আল আকসা মসজিদ এবং আরব বিশ্বের যে নীরবতা সেটি ফুটিয়ে তুলেছি। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিরা যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে সেটিও এখানে ফুটে উঠেছে তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে তুফান। আমরা তাদের প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে চিত্র কর্মটি করি।  

মূলত অসহায় ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে সমগ্র বিশ্বের ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে জাগাতেই আমরা ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে এই প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরেছি। আমরা আশাবাদী এই গ্রাফিতি সমগ্র বিশ্বের সাড়া জাগাবে। এই কাজটি বাস্তবায়নে সামাজিক সংগঠন ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ নিরঙ্কুশ সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ রকি, ওনার স্ত্রী জিনাত নাহার, মাহমুদুল ইসলাম মাহিন, শামীম সাইম, জয় মহাজনসহ আরও অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।