ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মানিকগঞ্জে চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক, ফসল কাটতে পারছে না কৃষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৪
মানিকগঞ্জে চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক, ফসল কাটতে পারছে না কৃষক

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। একের পর এক বিষাক্ত এ সাপের দেখা মিলছে উপজেলার চরাঞ্চলের পদ্মা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়।

এতে ভয়ে ফসলি জমিতে যাচ্ছে না কৃষকেরা।

পদ্মা নদী তীরবর্তী জেগে উঠা চরাঞ্চলে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ফসলের আবাদ করে থাকে। নদীর নির্মল আবহাওয়া ও চরাঞ্চলের নিরঞ্জনতার কারণে চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপের নির্ভরযোগ্য আবাসে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বিষধর সাপের মধ্যে এটি অন্যতম। তবে এ সাপ সম্পর্কে তেমন কিছু না জানায় স্থানীয়রা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পরিবেশ বাদী সংগঠনগুলোর মতে, সামাজিকভাবে গণসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে এ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।  

জানা যায়, জেলার হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী লেছরাগঞ্জ, সুতালড়ী,আজিমনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকার বিস্তীর্ণ জমিতে স্থানীয়রা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভূট্টা, বাদাম, তিল, পেঁয়াজ, আমন এবং আউশসহ মৌসুমি ফসলের আবাদ করে থাকেন। অন্যদিকে চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার আরও একটি মাধ্যম হলো গবাদিপশু পালন। চরের এই সব গবাদিপশু পালনের জন্য জমিতে ঘাসের চাষও করা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হওয়াতে চরাঞ্চলের বেশিরভাগ বসতিস্থল কাঁচা এবং ওই ঘরেই বসবাস করে থাকেন চরবাসী।

গত ১ মার্চ রঘুনাথপুরে লালমিয়া নামের কৃষক ভুট্টা ক্ষেতে পানি দেওয়ার সময় তাকে বিষধর ‘রাসেলস ভাইপার’ সাপে কামড় দেয়, তাৎক্ষণিক ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (ফরিদপুর ২৫০ বিশিষ্ট হাসপাতাল) নেওয়া হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ দিন পর লালমিয়া মারা যান।  

কিছু দিন পর চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ফসলের ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে সাপের কামড়ে এক কৃষক মারা যান, অনেকের ধারণা রাসেলস ভাইপার সাপের দংশনে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া এই চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপের কামড়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও ধারণা চরাঞ্চলবাসীর। যার ফলশ্রুতিতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বসবাস করা মানুষ রয়েছেন সাপ আতঙ্কে।

পদ্মা নদী তীরবর্তী সেলিমপুর চরাঞ্চলের নজরুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমি গত কয়েক দিন আগে জমি থেকে তিল কেটে রেখে আসি এবং পরে বিকেল বেলায় তিল তুলতে গিয়ে দেখি বেশ কয়েকটি চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপ। পরে এই সাপ দেখে ভয়ে জমি থেকে তিল না তুলেই চলে আসি।  

শিকারপুরের আরও এক কৃষক বলেন, গত কয়েকদিন আগে ধান কেটে আঁটি বেঁধে রাখি এবং মিনিট দশেক পর দেখি আটিকে পেঁচিয়ে ধরে আছে এই চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপ। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ওই চন্দ্রগোড়া সাপটিকে মেরে ফেলি কিন্তু চরাঞ্চলে যে পরিমাণে এই বিষধর সাপ দেখা যাচ্ছে, একটি সময় চরাঞ্চলে বসবাস করাটা দুর্বিষহ হয়ে পড়বে।  

অন্য জেলা থেকে আসা মৌসুমি শ্রমিক লাবু বেপারী বলেন, আমরা এই মৌসুমে ধানের কাজ করার জন্য এই অঞ্চলেই আসি প্রতি বছর। তবে পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চলে গত কয়েক বছর কাজ করেছি কিন্তু এই সাপের দেখা পাইনি। চলতি মৌসুমে তিন/চার জন গৃহস্থের বাড়িতে কাজ করেছি কিন্তু অধিকাংশ জমিতেই এই চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপের দেখা পেয়েছি এবং পাঁচটির মতো সাপ মেরেছি বলেও মন্তব্য করেছে এই শ্রমিক।  

লেছরাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এই ইউনিয়নটির চার পাশেই উত্তাল পদ্মা নদী। এ নদীর জেগে উঠা চরেই মানুষ মৌসুমি ফসলের আবাদ করে থাকেন। চরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হলো গবাদিপশু পালন ও কৃষি জমি চাষাবাদ। গত মার্চ মাসে আমার এই এলাকার এক কৃষককে চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপে দংশন করে পরবর্তীতে তার মৃত্যুও হয়। পাশের ইউনিয়নের বসন্তপুরে আব্দুল্লাহ নামের এক যুবককে এই সাপে দংশন করে এবং কামড়ের স্থানে পচন ধরেছে। পদ্মা নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের আজিমনগর, সুতালড়ি ও লেছরাগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা এখন এই বিষধর সাপের আতঙ্কে রয়েছেন।

হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গ নামের পরিবেশ সংগঠনের উপদেষ্টা তৈয়বুল আজহার বলেন, উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী তিনটি চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি স্থানে চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপ দেখা যাচ্ছে, এরি মধ্যে বেশ কয়েক জনকে কামড় দিয়েছে এবং কয়েক জন মারাও গেছেন। পৃথিবীর বিষধর সাপের মধ্যে এটি (রাসেল ভাইপার) অন্যতম। সাপটি খাবার হচ্ছে মূলত ইঁদুর, ব্যঙ্গ, টিকটিকি। যার কারণে ধানক্ষেত, ভুট্টাক্ষেতে এই সাপের দেখা মিলছে বেশি। এই বিষধর সাপ থেকে মানুষকে রক্ষায় প্রতিটি ইউনিয়নে গণসচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, চরাঞ্চলে যে সব ফসলি জমি রয়েছে, প্রতিটি জমি থেকে ফসল তোলার সময় অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এবং রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান বলেন, সম্প্রতি পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার নামের বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। অপর দিকে উপজেলা পরিষদ থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলে কৃষকদের বিশেষ জুতার (গামবুট) ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ৩ জুন ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।