ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফুল চাষ করে তাক লাগিয়েছেন নড়াইলের আল-আমিন

এম এম ওমর ফারুক,  ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪
ফুল চাষ করে তাক লাগিয়েছেন নড়াইলের আল-আমিন

নড়াইল: নড়াইলে সদরের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রথমবারের মতো ফুল চাষ করে তাক লাগিয়েছেন ফুল ব্যবসায়ী আল-আমিন মোল্যা। তার বাগানে শোভা পাচ্ছে কয়েক রকমের গোলাপ আর জারবেরা।

২০২১ সালে নড়াইল সদরের পোড়াডাঙ্গায় নিজ গ্রামে অল্পজমিতে গ্লাডিওলাস ও গোলাপ ফুলের পরীক্ষামূলক চাষ করেন ঢাকার ফুল ব্যবসায়ী আল-আমিন মোল্যা। ২০২২ সালে উৎপাদন আশানুরূপ ফুল হওয়ায় ওই বছরেই নিজের দুই একর জমিতে আলাদাভাবে চাষ শুরু করেন।  

২০২৩ সালে আলাদা করে জারবেরা ফুলের শেড তৈরি করেন তিনি। এখন তার গোলাপ বাগানে কাঠগোলাপসহ নানা প্রজাতির গোলাপ আর জারবেরা শেডে রয়েছে নানা রঙের ফুল।

জানা গেছে, আল-আমিন মোল্যা নিজে একজন ফুল ব্যবসায়ী। তিনি যশোরের গদখালি আর ঢাকা সাভার থেকে নানা ধরনের ফুল কিনে নিয়ে ঢাকায় নিজের ব্যবসাকেন্দ্রে বিক্রি করেন। নিজের ব্যবসার চাহিদা মিটিয়ে এই অঞ্চলে ফুলচাষ বৃদ্ধি করাই তার উদ্দেশ্য।

ফুল ব্যবসায়ী আল-আমিন মোল্যা বলেন, প্রতিবছর কেবল ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ এবং ২১ তারিখে তিনি ১০ লাখ টাকা ফুল বিক্রি করি। গত ১০ বছর ধরে আমি এই ব্যবসা করছি। তাই আমাদের নড়াইলের মাটিতে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে এখন ভালো ফল পাচ্ছি। আমাদের মাটিতে যেহেতু ফুলের চাষ সম্ভব তাই আমি চেষ্টা করছি আমাদের এলাকায় আরও ফুলের বাগান গড়ে উঠুক।

তিনি আরও বলেন, আমার ফুলের বাগানে চাষ করা হয়েছে কয়েক প্রজাতির গোলাপ, কাঠ গোলাপ, নানা রঙের জারবেরা, রজনীগন্ধাসহ নানা প্রজাতির ফুল। নতুন এই বাগান দেখতে প্রতিদিন স্থানীয়রা যেমন আসছেন তেমনি দূর দুরন্ত থেকে ফুলের বাগান আর ফুল দেখতে আসছেন ফুল প্রেমীরা।

নড়াইল সদরের আউড়িয়া থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ফুলবাগান দেখতে এসেছেন মোস্তফা কামাল। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা আগে যশোরের গদখালি যেতাম ফুল দেখতে এখন নিজের এলাকায় ফুলবাগান দেখতে পারছি। এটা খুবই আনন্দের।

আল-আমিন মোল্যার ফুল বাগান পরিচর্যার কাজে করছেন তিনজন শ্রমিক। তারা প্রতিনিয়ত বাগানে পানি দেওয়া থেকে শুরু করে আগাছা পরিষ্কার করেন।

এদের একজন সবুজ মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন বাগানে নিয়মিত পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ থেকে শুরু করে ফুল বড় হওয়া পর্যন্ত তদারকি করতে হয়। একটা ফুল নষ্ট হয়ে গেলে আকার ছোট হলে তা আর চলে না।

জেলায় প্রথমবারের মতো ফুলচাষ দেখতে স্বপরিবারে এসেছেন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, জেলায় বাণিজ্যিক ফুলচাষ এটাই প্রথম। নড়াইলের মাটি ফুলচাষের জন্য উপযোগী এটা প্রমাণিত। এখানে আল-আমিন মোল্যার দুই একর জমি ছাড়িয়ে ১০ একর জমিতে ফুলচাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ্বতী শীল বলেন, এখানে ফুলগুলো দেখে আমার রবী ঠাকুরের ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে গানটি গাইতে ইচ্ছে করছে। ফুল যেমন নারীরা বেশি ভালোবাসে তেমনি নারীও ফুলের মতো নিজেকে সাজাতে চায়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ফুল মনের খোরাক যোগায়-ভালোবাসার প্রতীক। আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে এর ব্যবহার হচ্ছে। নড়াইলে ফুলবাগান দেখতে পাবো এমন আশা করিনি। আমাদের আর ফুল কিনতে যশোর যেতে হবে না।

আল-আমিনের ফুলের বাগানের নাম দিয়েছেন ‘জিফা অ্যান্ড তায়েবা অ্যাগ্রো’। এখানে বর্তমানে দুই একর ফুলের বাগানের জারবেরা, রজনীগন্ধা, টিউলিপসহ বাগানের দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান থেকে উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি মাসে তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়।

তিরি আরও বলেন, আল-আমিনকে দেখে এখানে আরও ফুলের বাগান গড়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কৃষি বিভাগ চাষিদের নানা পরামর্শসহ প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন এটাই প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।