ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে নতুন জঙ্গি সংগঠন তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ: এটিইউ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩
দেশে নতুন জঙ্গি সংগঠন তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ: এটিইউ

ঢাকা: তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী) নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।

গত ২-৩ মাস ধরে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

২০২৪ সালে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল সংগঠনটির।

তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নতুন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা মো. জুয়েল মোল্লাসহ (২৯) তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে এটিইউ। গ্রেপ্তার বাকি দুজন হলেন, মো. রাহুল হোসেন (২১) ও মো. গাজিউল ইসলাম (৪০)।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউ‘র ডিআইজি (অপারেশন্স) মোহা. আলীম মাহমুদ।

তিনি বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পরিচালিত অভিযানে জুয়েলকে বাগেরহাট থেকে, জয়পুরহাট থেকে রাহুলকে ও রাজধানীর ভাসানটেক এলাকা থেকে গাজীউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে জুয়েল এই সংগঠনের প্রধান। বাকি দুজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সংগঠনটি ২-৩ মাস ধরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ২০২৪ সালে দেশে বড় ধরনের হামলা করার।

এটিইউ’র এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা গত কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খবর পাচ্ছিলাম কিছু উগ্রবাদী মানুষ একত্রিত হচ্ছে। যারা কিনা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচাল করে উগ্রবাদী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য তারা একত্রিত হচ্ছিল।

গ্রেপ্তাররা সবাই আগে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। কিন্তু তারা নতুন লক্ষ্য নিয়ে একটি ব্যানারে সবাই নতুন করে একত্রিত হচ্ছিল। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে নতুন সংগ্রহ করে আসছিল।

এটিইউ কর্মকর্তা বলেন, এই দলের প্রতিষ্ঠা ও প্রধান নেতা হলেন জুয়েল। আমরা প্রথমে জুয়েলকে বাগেরহাটের রামপাল থেকে গ্রেপ্তার করি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাকি দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারের সময় নতুন সংগঠনের ৮টি ব্যানার জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অর্থও সংগ্রহ করছিল। এই অর্থ দিয়ে তারা অস্ত্র কেনা সহকারে বোমা তৈরি সরঞ্জাম সংগ্রহ করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই অস্ত্র ও বোমা দিয়ে তারা বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসীম উদ্দিন রহমানি বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন, তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয় জুয়েল। এর ফলে তিনি নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করেন। জুয়েল নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। জসীম উদ্দিন রহমানিকেও কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের।

সংগঠনটির অর্থের যোগানদাতা কারা এবং সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কত জানতে চাইলে এটিইউ কর্মকর্তা বলেন, সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০-৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিলেন রাহুল। এছাড়া রাহুল বোমা তৈরির দায়িত্বেও ছিলেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ২০২৪ সালে বড় একটি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তারা অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহসহ বোমা বানানোর চেষ্টা করছিল। তবে তাদের হামলার টার্গেট কী, তা এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানার চেষ্টা করব।

সংবাদ সম্মেলনে এটিইউ’র পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) মাহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল মোল্লা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই সময়ে কারাগারে বসেই নিজের একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করেন। মাত্র ক্লাস সেভেন পাস জুয়েল মোল্লা পেশায় একটি বেকারি কর্মী ছিলেন। আর বাকি গ্রেপ্তার দুজন জবুত তাওহীদের সদস্য ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, রাহুল হোসেন পেশায় একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকায় বাহুল বোমা তৈরির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন। এছাড়া বোমা হামলার অর্থ জোগাতে নিজের জমি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাহুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।