ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রচণ্ড তাপদাহে নাজেহাল মানুষ, পুড়ছে ফসলের মাঠ

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
প্রচণ্ড তাপদাহে নাজেহাল মানুষ, পুড়ছে ফসলের মাঠ

নীলফামারী: সারাদেশের মতো নীলফামারী জেলায়ও প্রচণ্ড তাবদাহ বইছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।

ঘরের বাইরে যেন বয়ে যাচ্ছে আগুনের ফুলকি। এতে ক্ষেতের ফসল পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় ঘন ঘন লোডশেডিং মানুষকে ফেলেছে চরম বেকায়দায়। একটুখানি ছায়ার জন্য লোকজন ছুটছেন গাছতলায়, বটবৃক্ষ ছায়ার তলে।

নীলফামারী জেলা প্রশাসন তীব্র দাবদাহে হিটস্ট্রোক এড়াতে সতর্ক বাণী প্রচার করেছে।

জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুর উপজেলায় গরমের কারণে বেশিরভাগ দিনমজুর ও শ্রমিক কাজে বের হতে পারছেন না। বের হলেও ১০-১৫ মিনিট বাইরে থাকতেই তারা হাঁপিয়ে উঠছেন।

বয়োবৃদ্ধরা জানান, জীবনে এরকম গরম তারা আর দেখেননি। বাইরে বের হলেই শরীরে র‌্যাশ/ফোঁসকা পড়ে যাচ্ছে।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, গত কয়েকদিন ধরে ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। আকাশে মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে না। আগামী ৯ জুনের আগে আবহাওয়ার কোনো ভালো খবর নেই। তবে এই জনপদের দুই-এক জায়গায় বৃষ্টিপাত হলেও হতে পারে।

তীব্র এ তাপদাহের মধ্যে শহর ও গ্রামে সমানতালে চলছে লোডশেডিং। মধ্যরাতেও দীর্ঘ সময় লোডশেডিং হওয়ায় মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। অনেক জায়গায় দিন-রাত মিলে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টাই লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে ইজিবাইক ও রিকশা ভ্যানের ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে না। এতে করে সেসবের চলাচল অনেক কমে গেছে।

প্রচণ্ড গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছুটছেন হাসপাতালে। প্রচণ্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস শুরু হয়েছে জনজীবন। জেলার কোনো কোনো স্থানে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে খাল-বিলসহ মাটি।

নীলফামারী জেলা প্রশাসনের মতে গরমের কারণে শরীরে অস্বস্তিবোধ, পানিশূন্যতা, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, অনিন্দ্রা, মাংসপেশিতে ব্যথা, খাবারে অরুচি, চামড়ার ক্ষত, কিডনি ও ফুসফুসে সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, হিটস্ট্রোক, হিটক্রাম্পস ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য অতিরিক্ত পানি পান, চা ও কফি পান থেকে বিরত, ভাজা পোড়া এড়িয়ে চলা, বাইরে বের হলে ছাতা ও টুপি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকরা এই প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই ধান সেদ্ধ করার পর রোদে শুকাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ধানের চাল রোদের তীব্রতায় ভেঙে যাচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া ধান সহ্য করতে পারেনি বলে জানান কৃষকরা।

তীব্র দাবদাহের কারণে ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের কথা বিবেচনা করে আগামী ৮ জুন পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তীব্র দাবদাহ ও গরমে তৃষ্ণা মেটাতে লোকজন ছুটছেন শরবতের দোকানে। লেবু শরবত, বেল শরবত ইত্যাদি শরবত বিক্রি হচ্ছে দোকানগুলোতে। জমে উঠেছে তাল শাঁস বেচাকেনা। এসব তাল শাঁস বিক্রেতারা আসছেন বাইরের জেলা জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে।

সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার জানান, প্রচণ্ড গরমে মানুষ অনেক ঘামে। এতে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। তাই বেশি করে পানি পান করা উচিত। রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলতে হবে। বিশেষ করে হিটস্ট্রোক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৩ 
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।