ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢোলের বাড়িতে লাঠিয়ালদের কেরামতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
ঢোলের বাড়িতে লাঠিয়ালদের কেরামতি

মেহেরপুর: ঢোল, কাশি আর চড়বড়ি বাদ্যের তালে তালে ঘুরছে লাঠি। চারিদিকে নানা বয়সি নারী পুরুষের উল্লাস।

এ যেন আবহমান বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলন।

ঢোলের বাড়িতে লাঠিয়ালদের কেরামতি। শক্ত হাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দেখাতে থাকেন নানা কৌশল। তাতে উৎসাহ দেন দর্শকরা। যেখানে জয়-পরাজয় মুখ্য নয়। দর্শকদের বিনোদন দেওয়ায় লাঠিয়ালদের মূল লক্ষ্য। অবশ্য লাঠিয়ালদের শূন্য হাতে নয়, খেলা শেষে ধরিয়ে দেওয়া হয় প্রতিটা দলকে একটি করে খাসি।

গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের পীরতলা গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা প্রতিযোগিতায় দিনভর ছিল উৎসব।

আর এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝেও ছিল উৎসবের আমেজ। লাঠি খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সের নারী পুরুষ।

পীরতলা ব্লাড গ্রুপের আয়োজনে মঙ্গলবার (৩০ মে) দিনব্যাপী পীরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে লাঠি খেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বসে গ্রামীণ মেলা।

ইটভাটা ব্যবসায়ী হাজী মহাম্মদ আব্দুল মতিন এতে সভাপতিত্ব করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- মটমুড়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ চঞ্চল, বামন্দী ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি জিয়ারুল ইসলাম জিয়া, কাজীপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মটমুড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য নিজাম আহমেদ।

লাঠিখেলার সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন রবিউল হাসান রবি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

খেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৬টি দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এতে নেতৃত্বে প্রদান করেন সব দলের নেতা।

স্কুল শিক্ষক আব্দুল হাদী বলেন, এক সময় বাংলাদেশের সর্বত্র এই লাঠি খেলা শিল্পের প্রচলন ছিল। বর্তমানে এটি কিছু অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল যুগ এসে এ জনপ্রিয় খেলাটি প্রায়ই বিলীনের পথে। এখানে এই আয়োজন করায় নতুন প্রজন্ম লাঠি খেলা দেখতে পারছে।  

লাঠি খেলা দেখতে আসা ৭২ বছরের বৃদ্ধ রফেজ উদ্দীন বলেন, একসময় লাঠি খেলা ছিল মানুষের কাছে জনপ্রিয় খেলা। গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র উৎস ছিল এ লাঠি খেলা। ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি বৈশাখী মেলা, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন এই খেলা আর দেখা যায় না। অনেকদিন পর সেই ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা দেখতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।

প্রথমবারের মতো এ খেলা দেখতে এসে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সবুজ হোসেন জানায়, এ ধরনের খেলা সে আগে কখনো দেখেনি। লাঠি নিয়ে একে ওপরের লাঠির ওপর মারছে খুব ভাল লাগছে তার।  

লাঠিয়াল আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ ও বিনোদন জোগাতে আমরা লাঠি খেলা দেখাই। তাদের আনন্দে আমরাও আনন্দিত হই। আমার বাবা ও দাদা এক সময় লাঠি খেলতেন, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে লাঠি খেলি।

অপর লাঠিয়াল সোহেল রানা বলেন, এটা শুধু খেলা নয়। এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার কৌশলও শেখা যায়। অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হলে, খালি হাতেও বেঁচে আসা সম্ভব। তাছাড়াও শারীরিক কসরতে এ খেলাটি একটি অন্যতম ব্যায়াম।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।