ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাসায় আরবি পড়াতে গিয়ে মৌখিক বিয়ে, গরু জবাইয়ের ছুরিতে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
বাসায় আরবি পড়াতে গিয়ে মৌখিক বিয়ে, গরু জবাইয়ের ছুরিতে হত্যা

ঢাকা: বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতে গিয়ে তৈরি হয় সুসম্পর্ক। একপর্যায়ে সবার অগোচরে ছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন শিক্ষক মো. সাইদুল ইসলাম (২৫)।

পরবর্তিতে পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে ছাত্রীকে রাজি করাতে না পারায় ক্ষিপ্ত হন এই গৃহশিক্ষক।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাইয়ের ছুরি বানিয়ে নেন গৃহশিক্ষক সাইদুল। এরপর বাসায় ঢুকে সেই ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে কলেজছাত্রী রাবেয়াকে (২১) খুন করেন সাইদুল। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ওই ছাত্রীর মা ও দুই বোনকেও কুপিয়ে জখম করেন তিনি।

গত ৮ মে গাজীপুরের সালনায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে কলেজছাত্রীকে হত্যা এবং নিহতের মা ও ২ বোনকে মারাত্মকভাবে জখম করেন সাইদুল ইসলাম।  

বুধবার (১০ মে) টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সাইদুল।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তার সাইদুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, ২০২০ সালে করোনাকালীন সময় ভিকটিম রাবেয়া, তার দুই বোন ও মাকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে সাইদুল নিয়োগ পান। এ সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত ভিকটিমের বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সাইদুল। ৫-৬ মাস আরবি শিখানোর পর তার কাছে আরবি পড়া বন্ধ করে দেন রাবেয়া।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভিকটিমকে মৌখিকভাবে বিয়ে করে। বিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। ভিকটিমের পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে ভিকটিমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

র‌্যাবের এ কমান্ডার বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবরে ভিকটিম গাজীপুর সদর থানায় তাকে উত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে সাইদুল কিছুদিন ভিকটিমকে উত্যক্ত করা হতে বিরত থাকেন। কিন্তু গত ২ মাস ধরে ভিকটিমের কলেজে এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্যক্ত করতে থাকেন। প্রস্তাবে রাজি না হলে ভিকটিমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় সাইদুল।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, একপর্যায়ে সাইদুল জানতে পারেন ভিকটিম উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।  পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৭ মে বিকেলে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেয়। পরদিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় গিয়ে সরাসরি তার রুমে ঢুকে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে উপর্যুপুরি আঘাত করের।

এ সময় ভিকটিমের চিৎকারে তার মা ও দুই বোন আসলে তাদেরকেও ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয় জখম করে পালিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে ভিকটিমের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদরাসা থেকে দাওরা পাস করে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এর পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতেন। দুই মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দিয়ে শুধু বাসায় আরবি পড়াতেন। ঘটনার পর থেকে নিজের চুল-দাড়ি কিছুটা কেটে চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাঁপুরে এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যান। সেখান থেকে তাকে গত রাতে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
পিএম/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।