ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দারিদ্র্যজয়ী ১০৪ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সহায়তা

শতাধিক শিক্ষার্থীর নতুন জীবনের গল্পের শুরু

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩
শতাধিক শিক্ষার্থীর নতুন জীবনের গল্পের শুরু

দারিদ্র্য জয় করা অদম্য মেধাবী ১০৪ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। গত মঙ্গলবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাবরিনা সোবহানসহ অন্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

ওদের ঘরে অভাবের ছোবল নিত্যদিনের। এক পাশে দরিদ্রতা, অন্য পাশে সমাজের বহুবিধ সীমাবদ্ধতা। কিন্তু ওরা অদম্য। বুকে অসীম বল। স্বপ্ন মহাকাশছোঁয়া। সব সীমাবদ্ধতা দুমড়েমুচড়ে জীবনযুদ্ধে ওরাই জয়ী। অনেকের পরিবারও মাঝপথে নিয়েছিল পিছুটান, এসএসসিতে ভালো ফল এনে সেখানেও তারা বুনে দিয়েছে আশার বীজ। এবার শুরু নতুন জীবনের গল্প। এই গল্পে তারা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছে নিজেদের পথ। এমন ১০৪ জন অদম্য মেধাবীর লক্ষ্যপূরণের পথে সঙ্গী হয়েছে শুভসংঘ। তাদের সাহসী করে তুলেছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

গত ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের নানা প্রান্তের ১০৪ জন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা জড়ো হয়েছিলেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে। এরপর তাঁদের সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাসায়। ওখানে স্বপ্নালুরা বসে আছে পাশাপাশি। কেউ কাউকে চেনে না। অথচ সবার একটাই পথ। একটাই লক্ষ্য। নতুন গল্পের সূচনালগ্নে আবেগের জলে ভিজেছে ওদের চোখ। কণ্ঠে ঝরেছে কত না-বলা কথা। কেউ হতে চায় ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ বা চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ বা আবার পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের এই নতুন পথচলায় সঙ্গী হয়েছে শুভসংঘ।

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে এই মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যার আয়োজন করে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। গত মঙ্গলবার প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন সায়েম সোবহান আনভীর। শুধু তা-ই নয়, এই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যপূরণের প্রতিটি ধাপে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন শিল্প খাতের টাইটান ও তরুণ প্রজন্মের এই পথপ্রদর্শক।

নগদ বৃত্তি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত লামিয়া খাতুন। এসএসসি পরীক্ষার মাত্র এক মাস আগে বাবাকে হারায় নান্দাইলের পূর্ব শিবনগর গ্রামের এই তরুণী। বাবার শোক বুকে নিয়েই বসে এসএসসি পরীক্ষায়। ভালো ফল অর্জন করলেও পড়াশোনার বাড়তি ব্যয় মেটানোর সাধ্য নেই পরিবারের। তাই পরিবার থেকে আসে বিয়ের চাপ। কিন্তু লামিয়া যে আগে থেকেই বুনেছিল অনেক স্বপ্ন। তাই নিজেই ঠেকিয়ে দেয় নিজের বাল্যবিবাহের আয়োজন। এক পর্যায়ে শুভসংঘের নজরে আসে সিংহৈল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী লামিয়া খাতুন।

বৃত্তি পেয়ে আবেগমাখা কণ্ঠে লামিয়া জানিয়েছে তার গন্তব্যের কথা। তার ইচ্ছা বড় আইনজীবী হওয়ার। এরই মধ্যে সমুর্তজাহান মহিলা কলেজে ভর্তিও হয়েছে। সে বলে, ‘এই প্রথম ঢাকায় এসেছি। কখনো ভাবতেই পারিনি আমার লক্ষ্য অর্জনের পথে কাউকে পাব। পরিবারও এখন নির্ভার। অন্য কিছু নয়, আমি এখন শুধু আমার লক্ষ্য নিয়েই ভাবছি। ’

মাদারীপুরের শিবচর থানার রামরায়ের কান্দি গ্রামে মিতা মালোকে দেখা গেল বান্ধবীর সঙ্গে সেলফি তুলতে। চোখেমুখে আলোর ঝলকানি। অথচ কিছুদিন আগেও তার কপালে ছিল অনিশ্চয়তার মেঘ। উচ্চশিক্ষা অর্জনের প্রবল আগ্রহ থাকলেও ব্যয় মেটানোর সাধ্য নেই। বাবা কাঞ্চন মালো নদীতে মাছ ধরে যে আয় করেন, তাতে সংসার চালাতেই হিমশিম অবস্থা। শুভসংঘের সঙ্গ পেয়ে নতুন আশার বীজ বুনেছে। এখন তার লক্ষ্য ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া। খুব আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠেই শোনাল নতুন স্বপ্নের কথা, ‘বসুন্ধরা যদি পাশে থাকে, আমি ম্যাজিস্ট্রেট হবই হব। এর মাধ্যমে সমাজকে সুন্দর করতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ায় অংশীদার হতে চাই। ’

মালোর বান্ধবী শান্তি আক্তারের ইচ্ছা পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার। কারণ সে ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে, পুলিশ মানেই খারাপ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সম্পর্কে মানুষের খারাপ ধারণা তাকে ভীষণ পীড়িত করে। তাই নিজেই ওই পর্যায়ে গিয়ে দেখিয়ে দিতে চায়, পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে ভালো কিছু করা যায়। এই দুই বান্ধবী মাধ্যমিক শেষ করেছে উমেদপুর অজিফা রবিউল্লাহ লাইসিয়াম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এখন তারা ভর্তি হয়েছে ড. নুরুল আমিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে।

শান্তি আক্তারের বাড়ি শিবচরের আলেপুর গ্রামে। বাবা লিটন চৌকিদার ভ্যানগাড়ি চালান। শান্তিদের টানাটানির সংসারে অভাবের অশান্তি লেগেই থাকে। মাঝপথে পড়াশোনা থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল বহুবার। একমাত্র নিজের মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি শান্তি আক্তারকে এসএসসিতে এনে দিয়েছে সর্বোচ্চ সাফল্য। এখন মেয়েকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই লিটন চৌকিদারের। তিনিও চান মেয়ে তার লক্ষ্যে পৌঁছাক। পাশে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও সায়েম সোবহান আনভীরকে তাঁরা বাঁধলেন কৃতজ্ঞতার সুতায়।

অনটনের সংসারে অভাব ঘোচাতে রিকশার পেডাল ঘোরাতে শুরু করে শেরপুরের দুই ভাই মিনহাজুল আবেদীন ও তৌহিদুর রহমান। তাদের সংসারে অভাব ছিল না। পাঁচ বছর আগে বাবা মোশারফ হোসেন ব্যবসায় বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েন। আচমকা ঝড়ে যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মেধাবী দুই ভাইয়ের ভবিষ্যৎ। তখন রোজ বাজার-সদাই হচ্ছিল না, পড়াশোনার চিন্তা তো বহুদূর। কিন্তু অদম্য দুই ভাই ঠিকই সফল। এক হাতে পড়াশোনা, অন্য হাতে সংসারের ঘানি টানা—কোমলমতি দুই হাতই হয়ে ওঠে ওদের নিজেদের ভরসার প্রতীক। শেরপুর ছেড়ে চলে আসে টঙ্গীতে। দুই ভাই হাতে তুলে নেয় দুটি রিকশা। দিন যায়, ঘোরে রিকশার চাকা। অবশেষে সফলতার হাসিও তাদের মুখে। টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে সর্বোচ্চ ফল বয়ে আনে দুই সহোদর। বসুন্ধরা গ্রুপকে পাশে পেয়ে দুই ভাইয়ের চোখেমুখে আনন্দাশ্রু। আবেগী কণ্ঠে তুলে ধরে জীবনের পরতে পরতে মিশে থাকা কষ্ট, শ্রম, সাধনা, স্বপ্ন আর সব শেষে নতুন লক্ষ্যের কথা। সহমর্মিতার এই ধারা অব্যাহত থাকলে তারা সুচিকিৎসক হতে চায়। তারা জানায়, বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেও অর্থের অভাবে তাঁর চিকিৎসা করাতে পারেননি। অসুস্থ বাবাকে দেখভালের পাশাপাশি সংসারের ঘানি টানার পরও এসএসসিতে ভালো ফল পেয়ে ঠিক করে নতুন লক্ষ্য। কিন্তু সাধ পূরণের সাধ্য যে নেই। এখন বসুন্ধরা গ্রুপকে পাশে পেয়েছে। নিশ্চয়ই চিকিৎসক হতে পারবে, এমনই আশা তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।