ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাব রেজিস্ট্রারের ওপর হামলা: বন্ধ রেজিস্ট্রেশন, দলিল লেখকরা আতঙ্কে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
সাব রেজিস্ট্রারের ওপর হামলা: বন্ধ রেজিস্ট্রেশন, দলিল লেখকরা আতঙ্কে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: শিবগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে নিজ এজলাসে হামলার শিকার হন সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। এ ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

তবে, বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়। অন্যান্য জেলা-উপজেলায় কার্যক্রম শুরু হলেও শিবগঞ্জ ছিল ব্যতিক্রম। এদিন সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কোনো কাজ হয়নি।

জানা গেছে, সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী না থাকায় ভোলাহাট উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার বিদ্যুৎ কুমার মণ্ডলকে শিবগঞ্জে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে এ কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। কারণ, তিনি হামলা ও এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কাজে ব্যস্ত। এদিকে, ইউসুফ আলীকে মারধরের ঘটনায় অফিস সহকারী মামুনুর রশিদের মামলার ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন দলিল লেখকরা। কার্যালয়ের প্রতিটি দরজায় তালা, দলিল লেখকদের ছাউনিও ছিল শূন্য। যে কারণে রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে দিনের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে অফিস চলাকালীন সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে। পরদিন বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাতে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে অফিস সহকারী মামুনুর রশিদ। এ মামলায় পুলিশ তিন দলিল লেখকসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রতিবাদ করেছেন দলিল লেখকরা। তারা মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াতকে দায়ী করেন। একইসঙ্গে সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে শিবগঞ্জ থেকে বদলির দাবি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক সিলুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, তিনি বুধবার গভীর রাতে জেলা রেজিস্ট্রারকে ফোন করে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কের ব্যাপারে জানান। এ সময় জেলা রেজিস্ট্রার আফছানা বেগম তাকেসহ লাইসেন্সধারী দলিল লেখকদের অযথা হয়রানী করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। এ তথ্য বাংলানিউজকে নিজেই জানিয়েছেন আফছানা।

ঘটনা পরবর্তী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার আফছানা বেগম বলেন, বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিবগঞ্জসহ ৫ উপজেলা রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চালু আছে। জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে ভোলাহাট উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার বিদ্যুৎ কুমার মণ্ডলকে শিবগঞ্জে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বিদ্যুৎ কুমার মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্যস্ত। তা ছাড়া রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ, দলিলে লেখকরা মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ অবস্থায় সরকারি কাজ কীভাবে হবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শুধু মাত্র আজকের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন বিদ্যুৎ কুমার। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারেই শুধু ব্যস্ত নন, বরং সরকারি যে সমস্ত কাজ রয়েছে সেগুলো করছেন। তা ছাড়া দলিল লেখকরা সন্ত্রাসী বা দুর্বৃত্ত নয়। তারা
লাইসেন্স প্রাপ্ত চিহ্নিত দলিল লেখক। তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা আদৌ দলিল লেখক কিনা সেটা তাদের বিষয়।

বিষয়টি নিয়ে ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, হামলার শিকার সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দলিল লেখক সমিতিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে ওই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এ নিয়ে আমাকে দায়ী করে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতি দেয়ায় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় অপ্রত্যাশিতভাবে বিষয়টি উঠে আসে। তবে সেখানে সাব রেজ্রিস্ট্রারের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মামলার ব্যাপারে বাদী মামুনুর রশিদের সঙ্গে কথা হয়। কর্মবিরতি প্রত্যাহার হলেও তিনি কেন অফিসে নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা হয়েছে। সেটি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সাব রেজিস্ট্রার ও আমি ব্যস্ত। এ জন্য অফিসে যেতে পারিনি।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সুকোমল দেব বলেন, গত মঙ্গলবার হামলার ঘটনায় ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে ৩ দলিল লেখক ও এক সহকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  মামলার তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, শিবগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের এক কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। পরে তার স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তান নিজেদের অনুকূলে পেনসনের অর্থ প্রাপ্তির সুপারিশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর কাছে যান। সেখানে কোনো সমাধান না পেয়ে তারা ইউএনও আবুল হায়াতের কাছে যান। ১৫ মাস ধরে দুজনের কাছে ঘুরেও কোনো সমাধান না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা উপজেলা অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। পরে তিনিসহ উপজেলা চেয়ারম্যান ও কয়েকজন কর্মকর্তা সাব রেজিস্ট্রারের এজলাসে যান। তারা ইউসুফ আলীকে দ্রুত বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ করে চলে আসেন। এর দুই ঘণ্টার মধ্যে সাব রেজিস্ট্রার হামলার শিকার হন।

এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অহিদুল ইসলাম ও মহাসচিব এস এম শফিউল বারী একটি প্রতিবাদলিপি ইস্যু করেন। তারা ইউসুফ আলীর ওপর হামলার ঘটনায় ইউএনও আবুল হায়াতকে দায়ী করে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।