ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মাংসের চেয়েও বেশি দাম, বিয়ের কনের হাতে পেঁয়াজের তোড়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
মাংসের চেয়েও বেশি দাম, বিয়ের কনের হাতে পেঁয়াজের তোড়া

ফিলিপাইনে পেঁয়াজের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন শহরে রেস্তোরাঁগুলো পেঁয়াজের ঘাটতিতে ভুগছে।

নো অনিয়ন টপিংস (পেঁয়াজে খাবার সাজানো হয় না)- রেস্তোরাঁয় এই চিহ্ন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।  

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গেল মাসে ফিলিপাইনে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৭০০ পেসোতে (১২ দশমিক ৮০ ডলার) দাঁড়িয়েছে।  

প্রতি কেজি মাংসের দামও এর চেয়ে কম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দৈনিক সর্বনিম্ন আয়ের চেয়েও বেশি।  
 
যদিও গেল কয়েক সপ্তাহে দাম কিছুটা কমেছে, এখনও অনেক ক্রেতার কাছেই পেঁয়াজ বিলাসপণ্য। কথাগুলো বলছিলেন সেবু শহরের পিৎজারিয়া রেস্তোরাঁ চালানো রিজালদা মাওনেস।

তিনি বলেন, আগে আমরা দৈনিক তিন-থেকে চার কেজি পেঁয়াজ কিনতাম। এখন আমরা সাধ্যমতো আধা কেজি কিনতে পারি।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্রেতারা অবশ্য এটি বুঝতে পারেন। কেননা শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় নয়...বাড়িঘরেও লোকজন কঠিন সময় পার করছে। অনেক খাবারই পেঁয়াজ দিয়ে মিষ্টি করা হয়।  

ফিলিপিনো রন্ধনপ্রণালীতে পেঁয়াজ প্রধান উপাদান। এটি এখন জীবনযাত্রার খরচ বাড়ার প্রতীক হয়ে উঠেছে।  

মূল্যস্ফীতির কারণে এমনটি হয়েছে। খাদ্যদ্রব্য থেকে তেল সবকিছুরই দাম বেড়েছে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশটিতে গেল মাসে গত ১৪ বছরের মধ্যে সব কিছুর দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।  

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ও কৃষি সেক্রেটারি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বলেছেন, খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া জরুরি পরিস্থিতি।  

সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেব চলতি মাসের শুরুতে মার্কোস লাল ও হলুদ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেন।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিপাইনের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোয় চলমান চাহিদা তৈরি হয়েছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজসহ অন্যান্য খাদ্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।  

গেল বছরের আগস্টে কৃষি বিভাগ মূল জাতীয় ফসলের ঘাটতির আভাস দিয়েছিল। এর কয়েক মাসের মধ্যেই ফিলিপাইনে শক্তিশালী দুটি ঝড়ের কারণে ফসলের বেশ ক্ষতি হয়, বলেন আনজি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নিকোলাস মাপা।  

তিনি বলেন, অর্থনীতি যেহেতু ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেহেতু চাহিদার মধ্যেও ঊর্ধ্বগতি দেখতে পাচ্ছি।  

ফিলিপাইনের শহর সেবুর স্ট্রিট ফুড স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এসব খাবারের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। ফ্রাইড ভেজিটেবলস, মাংস ও সামুদ্রিক খাবার সাধারণত পেঁয়াজ ও ভিনেগার ডিপিং সস দিয়ে পরিবেশন করা করা হয়।

অ্যালেক্স চুয়া নামে এক দোকানি তার দোকানে পেঁয়াজ ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের খাবারের বড় একটি অংশ হলো পেঁয়াজ। এটি খাবারে মুচমুচে স্বাদ যুক্ত করে এবং লবণাক্ততা কমিয়ে খাবারকে মিষ্টি করে।  

তিনি বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ এই কারণে যে, সরকার দাম বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। আশা করি সরকার দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।  

ললিও শহরের তরুণী এপ্রিল লাইকা বিরয়ে নিজের বিয়েতে ফুলের তোড়ার বদলে হাতে পেঁয়াজের তোড়া নিয়ে আলোচনায় আসেন।  

স্থানীয় একটি পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাইকা বলেন, আমি আমার বরকে বলেছিলাম বিয়েতে ফুলের বদলে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে। বিয়ের পর তো ফুল শুকিয়ে যাবে এবং সেগুলো ফেলে দেওয়া হবে। তাহলে পেঁয়াজ কেন ব্যবহার করছি না। এটি বাস্তব যে, বিয়ের পরও তা ব্যবহার করা যাবে।  

দেশটিতে পেঁয়াজ চোরাকারবারির দায়ে অনেকে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের ১০ ক্র্যুকে তদন্তের আওতায় আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, লাগেজে প্রায় ৪০ কেজি পেঁয়াজ ও ফল পাচারের চেষ্টা।  

কাস্টমসের চিঠিতে বলা হয়, তারা অভিযুক্ত হবে না। অনুমতি ছাড়া পণ্য পরিবহন না করতে যাত্রীদের সতর্ক করা হলো।  

পেঁয়াজের সংকট প্রেসিডেন্ট মার্কোসকে চাপে ফেলে দিয়েছে। তিনি কৃষি সচিব হিসেবে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন। কয়েকজন আইনপ্রণেতা তার বদলে অন্য কাউকে নিযুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।  

দেশে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে এক শুনানিতে ফিলিপাইনের সিনেটর গ্রেস পো বলেন, আগে ছিল চিনি, এখন পেঁয়াজ। রান্নাঘরের সবকিছুর জন্য শুনানিতেই আমাদের সময় যাচ্ছে।  

কান্তার ওয়ার্ল্ডপ্যানেল পরামর্শক সংস্থার ম্যারি-অ্যানি লেজোরাইন বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন বড় হুমকি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।