ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

যুদ্ধে নামার আগে সোভিয়েতের সঙ্গে চুক্তি করেন ইন্দিরা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
যুদ্ধে নামার আগে সোভিয়েতের সঙ্গে চুক্তি করেন ইন্দিরা সোভিয়েতের সঙ্গে চুক্তি করেন ইন্দিরা/ফাইল ছবি

কলকাতা: পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ শুরু করার অনেক আগেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে সময় বাংলাদেশের উপর নৃশংস-নির্মম আক্রমণ শুরু করে দেয়, ঠিক সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা ছিলেন পশ্চিম ইউরোপ সফরে।

উদ্দেশ্য ছিল, কোনোভাবেই যেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানের পক্ষে না দাঁড়ায় সেটা অন্তত নিশ্চিত করা। তিনি চেষ্টা করেছিলেন ব্রিটেন এবং আমেরিকাকে বোঝাতে যে, পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ বেসামরিক জনগণের ওপর এই হামলা অনৈতিক।

কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সেই চেষ্টা সফল হয়নি।

ব্রিটেন এবং আমেরিকাকে বোঝাতে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হন। এরপর উপায়ান্তর না দেখে, তিনি তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংকে সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্রিটেন-আমেরিকার বিরোধী শিবির বলে পরিচিত সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠান। সে-সময় সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে ভারত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। ১৯৭১ সালের ৯ই আগস্ট চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, খুব দ্রুত আর তাড়াহুড়ো করে করা এই চুক্তির অন্যতম লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পশ্চিম  পাকিস্তানের আগ্রাসন রুখতে সোভিয়েত ইউনিয়নকে পাশে পাওয়া।  
...
ইন্দিরা গান্ধীর দূরদৃষ্টির পরিচয় মেলে এর কিছুদিন বাদেই। বাংলাদেশের পক্ষে ইন্দিরা গান্ধীর ভারতের সহযোগিতা ও সমর্থনে ক্ষুব্ধ হয়ে ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে ভারতের ১১টি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতও সমুচিত জবাব দেয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রথমে ঢাকার পাকিস্তানি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত বিমানঘাঁটিতে বোমা বর্ষণ শুরু করে। অন্যদিকে ভারতীয় নৌবাহিনী চট্টগ্রাম  বন্দরের ওপর পাকিস্তান নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রুখে দেয়।
 
কিছুদিন আগেই ভারত সরকারের প্রকাশ করা একটি নথি থেকে জানতে পারা গেছে, ব্রিটিশ এবং আমেরিকার নৌবাহিনী ভারতীয় নৌবাহিনী তথা ভারতের ওপর একযোগে আক্রমণ চালাবার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরে মোতায়েন বিশাল সোভিয়েত নৌবহর এদিকে অগ্রসর হবার পর ইঙ্গ-মার্কিন নৌবাহিনী তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে পিছু হটে।
 
ডিসেম্বর ১৪ তারিখে ভারতীয় সেনার তরফে মেজর জেনারেল জ্যাকব-এর কাছে আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। সেই মর্মে নিয়াজী ঢাকাস্থ অবস্থিত মার্কিন কনসাল জেনারেলের অফিসে একটি বার্তা পাঠান। সেখান থেকে বার্তাটি ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়।
 
অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ভারতীয় সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর সামনে আত্মসমর্পণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
ভি.এস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।