ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

মণিপুরের সঙ্গে অন্য রাজ্যের তুলনা চলে না: পি চিদম্বরম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
মণিপুরের সঙ্গে অন্য রাজ্যের তুলনা চলে না: পি চিদম্বরম

কলকাতা: ভারতের মণিপুরে হিংসার লজ্জা ঢাকতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়ার’র সাথে থাকা রাজ্যগুলিতে কোথায় কোথায় নারী নির্যাতন হয়েছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে বিজেপি। বোঝানোর চেষ্টা চলছে, মণিপুরে যদি কোনো হিংসার ঘটনা ঘটেও থাকে, একইরকম হিংসার ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং রাজস্থানেও।

বিশেষ করে মমতার বাংলাকে টার্গেট করছে মোদিবাহিনী।

এর কারণ গোটা ভারতে বিজেপিবিরোধী জোট যে এক ছাতার তলায় আনছেন তাঁর নাম মমতা। দূরত্ব মিটেছে মমতা-সোনিয়ার। ১৮ জুলাই বিজেপিবিরোধী জোটের নাম মমতা দিয়েছেন ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’, সংক্ষেপে ‘ইন্ডিয়া’।

শনিবার ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, রাজস্থানে নারী নির্য়াতনের মতো ঘটনা ঘটলে ছোট বা সাজানো ঘটনা? আর মণিপুরে হলেই কেন্দ্রের দোষ। মমতাদি কোথায় গেল আপনার মমতা? আপনার ওখানেও নারী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মনিপুরে যতটা অন্যায় হয়েছে, ততটাই নারী নির্য়াতনে অন্যায় করছে বাংলা, বিহার, রাজস্থান।

তবে কেন্দ্রীয় সরকার যাই বলুক না কেন মণিপুরের লাগাতার লজ্জাজনক সহিংসতায়, ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার বিজেপি অনেকটাই কোণঠাসা। এমন পরিস্থিতিতে রোববার (২৩ জুলাই) ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম সদস্য কংগ্রেসের শীর্ষনেতা পি চিদম্বরম বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, রাজস্থানে হিংসার ঘটনার উল্লেখ করে বিজেপি যেভাবে মণিপুর থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে, সেটা নিছক অপচেষ্টা, সফল হবে না।

এ দিন কংগ্রেস নেতা টুইটে মণিপুরের হিংসার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, মণিপুরে সরকার বলে কিছু নেই। কেন্দ্রের সরকার স্বেচ্ছায় কোমায় চলে যাচ্ছে। আর যদি ধরেও নিই যে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থানে নারীদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, তাতেও মণিপুরের সঙ্গে রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের কোনো রাজ্যের তুলনা চলে না।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩ মে রাজ্যটিতে জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৩০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন। বহু মানুষ ঘরছাড়া। এরপরই মণিপুরে হাজার হাজার সেনা নামিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তারমধ্যে নতুন করে বিতর্কের পারদ চড়েছে ২৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ঘিরে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই আদিবাসী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় গোটা দেশে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

এরপরই অপর দুটি ঘটনায় ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত। প্রয়াত এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। ঘরের ভেতর ওই নারীকে তালাবদ্ধ করে রেখে বাইরে থেকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। নৃশংস ঘটনাটি ঘটে মণিপুরের কাকচিং জেলার সিরও গ্রামে। ৮০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধা বিনোদেবীর স্বামী ছিলেন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী এস চূড়াচাঁদ সিংহ। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের হাতে সম্মানিত হয়েছিলেন ওই স্বাধীনতা সংগ্রামী। তার পরিবারের সাথে এমন একটি ঘটনায় হতবাক সকলেই। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ মে।

শুধু তাই নয়, গত ৪ মে দুই তরুণীকে জোরপূর্বক ধরে একটি ঘরের মধ্যে ঢোকানো হয় এবং মুখে কাপড় গুঁজে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে পাশবিক অত্যাচার। পরে রক্তাক্ত ও অর্ধ নগ্ন অবস্থায় ওই দুই তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়। গত প্রায় আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে মণিপুরের বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুটের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে গোটা ভারতবাসী। আর প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কেন্দ্রের সরকার। দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছে নাগরিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।