ঢাকা: শীতের মধ্যেও থামছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্ম-বর্ষাকাল ডেঙ্গু রোগের মৌসুম। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। যেখানেই পানি জমছে, সেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেসমেন্ট, বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি, তবে সাতজন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের প্রথম মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১৬১ জন। আর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।
২০২৪ সালের পুরো জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এক হাজার ১৫৫ জন। একই সময়ে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫১০ জন। একই সময়ে মোট ছয়জন ডেঙ্গুতে মারা যান। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১২৬ জন। তবে কেউ ডেঙ্গুতে মারা যাননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারি মাসের শীতেও হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরেও অনেক রোগী আছেন, যাদের নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় কোন সময় আসে না। পাশাপাশি এই সময়ে ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু উদ্বেগের। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জানা থাকার পরও সঠিক সময়ে যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে প্রতিবার ব্যর্থ হতে হচ্ছে।
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবং করণীর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক ড. কবিরুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, জানুয়ারি মাসে এতো রোগী হয় না। এ সময়ে এত সংখ্যায় ডেঙ্গুরোগী অস্বাভাবিক। এখন থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে।
কী ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া দরকার জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যেহেতু বৃষ্টি নেই, তাই এডিস মশা বিশেষ বিশেষ কিছু স্থানে আছে। যেমন, বহুতল ভবনের পার্কিং, গাড়ি ধোয়ার জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেসমেন্ট- এসব জায়গা সার্ভিলেন্সের মাধ্যমে চিহ্নিত করে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করা দরকার।
ডেঙ্গুর বাৎসরিক পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ০১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মারা যান ৫৭৫ জন। ২০২৩ সালের ০১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৪
আরকেআর/আরএইচ