ঢাকা: নির্বাচন কমিশন নয় বরং সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন নামে নতুন একটি পৃথক কমিশনের অধীনে নেওয়া হচ্ছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম।
ইসি কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলছেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ বাতিলের জন্য রহিতকরণ অধ্যাদেশ হচ্ছে। কিন্তু সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আলোকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি নিয়ে পৃথক কমিশন গঠন করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সম্প্রতি ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন শীর্ষক এক চিঠি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদকে পাঠান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. নিকারুজ্জামান।
এতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনা তুলে ধরেন তিনি। বৈঠকে আলোচনা হয়- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা ও জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক। এ উদ্দেশে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহিত আলোচনাপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করতে পারে।
এরপর প্রধান উপদেষ্টা সেই আলোচনার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত দেন।
বর্তমানে সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই কার্যক্রম গ্রহণ করছে সরকার।
প্রস্তাবিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন-২০২৫ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন হবে পাঁচ সদস্যের, মেয়াদ পাঁচ বছর। সম্পূর্ণ সংবিধিবদ্ধ কমিশনটির নিজস্ব তহবিল থাকবে, যেখানে সরকার এবং অন্য উৎস থেকে অর্থবহন করা হবে। তবে কমিশন তা স্বাধীনভাবে ব্যয় করবে।
কমিশনের কার্যবলী:
কমিশন, অধ্যাদেশের অধীন সিভিল রেজিস্ট্রেশনের উদ্দেশে যে কার্যাবলি সম্পাদন করবে।
(ক) নাগরিকের জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ ও দত্তক নিবন্ধন এবং মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের সঙ্গে স্থানান্তর, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার তথ্য-উপাত্ত অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যমান সিভিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার সার্বিক সমন্বয় ও উন্নয়ন সাধন।
(খ) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালন।
(গ) ইউনিক আইডি, সিআরভিএস এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার, ইন্টারঅপারেবিলিটি স্ট্যান্ডার্ড এবং সিটিজেন কোর ডাটা স্ট্রাকচারের ভিত্তিতে সমন্বিত সেবা দেওয়া ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন।
(ঘ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির (যেমন: ব্লকচেইন) ব্যবহার উপযোগিতা, আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পর্যালোচনাপূর্বক সরকারকে সুপারিশ দেওয়া।
(ঙ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
(চ) নাগরিক এবং সরকারি-সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য দ্রুত ও সহজ উপায়ে সিভিল রেজিস্ট্রেশন তথ্য-উপাত্ত দেওয়া।
(ছ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জনবান্ধব করার উদ্দেশে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ।
(জ) সমন্বিত সেবা দেওয়া প্রক্রিয়া তরান্বিতকরণের উদ্দেশে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহিত সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সম্পাদন।
(ঝ) সিভিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, বিদেশি রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সহিত চুক্তি সম্পাদন।
বর্তমানে এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে এবং জন্মনিবন্ধন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে হচ্ছে। এর আগেও ২০২৩ সালে সরকার এনআইডি কার্যক্রম ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সে উদ্যোগে ভাটা পড়লেও এখন পৃথক কমিশনের অধীনে নেওয়ার নতুন সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
যদিও সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, এনআইডি ইসির কাছেই থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে।
এদিকে এনআইডি কার্যক্রম নিয়ে যাওয়ার নতুন সিদ্ধান্তে ফের ক্ষোভ দানা বাধছে ইসি কর্মকর্তাদের মধ্যে। তারা ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করছে। সহসাই বিষয়টি ইসির অধীনে রাখা নিয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া তারা বিভিন্ন কর্মসূচিতেও যেতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৭ সাল থেকে তারা এ কাজটি করছেন। এতে তারা দক্ষ জনশক্তি হয়ে উঠেছে। এনআইডি কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া হলে সরকারের লোকবল তৈরি করতে সময় ও অর্থের অপচয় হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৫, আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা
ইইউডি/আরবি