ঢাকা, শুক্রবার, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৬ রমজান ১৪৪৬

শিক্ষা

ওড়নাকাণ্ড: অর্ণবকে চাকরিতে বহাল রাখলে ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৫
ওড়নাকাণ্ড: অর্ণবকে চাকরিতে বহাল রাখলে ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার ঘটনায় মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ঢাবির শিক্ষার্থীরা। তাকে পুনরায় চাকরিতে বহাল করা হলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সব নিপীড়নবিষয়ক তদন্ত প্রতিবেদন অতিসত্বর দাখিল করতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।  

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) অর্ণবকে আদালত থেকে জামিন দেওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগভিত্তিক বিবৃতি দিয়ে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।  

এ নিউজ লেখা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়েছেন।  

বিবৃতিতে তারা বলেন, বুধবার (৫ মার্চ) দুপুর দেড়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর থেকে ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পথে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণব নামে একজন কর্মচারী কর্তৃক হেনস্তার শিকার হন। এ ব্যক্তি ‘পর্দা কেন করেনি’, ‘ওড়না কেন ঠিক নেই’সহ আরও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তাকে উত্ত্যক্ত করে তোলেন। পরে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাকে শনাক্ত করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে গেলে তিনি এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।  

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করে অভিযুক্তকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে এবং অভিযুক্তের পক্ষে নানাভাবে মব উস্কানো শুরু হয়। রাত ১টায় ‘বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন’ নামে সংগঠন ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ থানায় মব সৃষ্টি করে অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করে। এ সময় ভুক্তভোগীকে উপস্থিত মব ‘শাহবাগী’, ‘প্রস্টিটিউট’ আখ্যা দেয়। এছাড়া গণমাধ্যমের সামনে অভিযুক্ত ভিকটিমের শারীরিক অবয়ব নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে।  

বিবৃতিতে তারা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের (২০০০) আওতায় হওয়া মামলার এজাহার পাবলিক নথি নয়, এক্ষেত্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মবের হাতে মামলার এজাহার তুলে দেয়, যার ফলে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি আবারও হেনস্তার শিকার হন।

বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেন, মামলা তুলে নিতে পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভুক্তভোগীকে প্ররোচিত করেছে।  

তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমত, তারা নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দ্বিতীয়ত, ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাওয়া অন্তরায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা তুলে নিতে প্ররোচিত করেছে। তৃতীয়ত, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং এর পরে ঘটা যৌন হেনস্তার সব প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও তাকে স্বপদে চাকরিতে বহাল রাখা নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঔদাসীন্য প্রকাশ করে।  

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা অর্ণবের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান। একইসঙ্গে এ ধরনের হীন চরিত্রের অধিকারী কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে যদি কোনোভাবে চাকরিতে বহাল রাখার চেষ্টা করা হয়, তবে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন। একইসঙ্গে অর্ণবকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।  

এদিকে মোস্তফা আসিফের ‘হেনস্তার’ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৫
এফএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ