ঢাকা: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংকটকালে মানুষের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে তৎকালীন ডাকসু নেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। বাংলাদেশ এখনো নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
রোববার (২ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় জাতীয় পতাকা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতারা এসব কথা বলেন।
এ সময় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মোদ্দাসসীর চৌধুরী, মুখপাত্র আশরেফা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, সদস্য সচিব, মহির আলম, মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম ও মুখ্যপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। জাতীয় জীবনে দিনটির তাৎপর্য ধরে রাখতে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের স্মরণে এ কর্মসূচি পালন করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা নির্বাচনের পরও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা করছিল। সেই সংকটকালে তৎকালীন ডাকসুর নেতারা দেশের হাল ধরেছিলেন। দেশের মানুষের নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ডাকসুর ভিপি স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখনো নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব অস্থিরতার মধ্যে আগামী দিনেও ডাকসুর নেতার হাল ধরবে বলে বিশ্বাস করি। সেজন্য ডাকসুসহ সব ছাত্রসংসদ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তাদের চাওয়া-পাওয়া নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই পূরণ করতে পারবে।
এদিকে রোববার (২ মার্চ) সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আ স ম আব্দুর রব আমন্ত্রিত হলেও শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, যারা ইতিহাস নির্মাণ করেন তারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক পরিচয় দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় পরিচয় নির্ধারণে যে কয়টি ঘটনা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস অন্যতম। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে এবছরের পতাকা উত্তোলন দিবস নতুন মাত্রা পেয়েছে। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে অকুতোভয় ছাত্রদের নেতৃত্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো। এসব ঘটনা আমাদের সাহস জোগায়। ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করার জন্য তিনি তৎকালীন ডাকসু নেতারা ও ছাত্রনেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতি আজ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এসময় ঐক্য ধরে রাখা জরুরি।
জাতির যেকোনো প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, আমরা ইতিহাসের গর্বিত উত্তরাধিকার। আমাদের সামর্থ্য কম। তারপরও অতীতের ন্যায় আমরা ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে বুক চিতিয়ে যেকোনো সমস্যা মোকাবিলায় দাঁড়াতে পারি। জাতীয় জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত উদ্যোগগুলো আমাদের সাহস দেয়। এ দিবসগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে আয়োজন করতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৫
এফএইচ/জেএইচ