ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কলকাতার ব্রিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনজোয়ার

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১১
প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কলকাতার ব্রিগ্রেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনজোয়ার

কলকাতা: প্রবল বৃষ্টির মধ্যে বৃহস্পতিবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ২১ জুলাইয়ের শহীদ দিবসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সভামঞ্চ থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার বিরাজমান ছিটমহল সমস্যা সমাধানের কথা বললেন।

এদিন ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার যেমন বাঁধ ভেঙে গ্রাম ভাসিয়েছে তেমনই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বাঁধ ভাঙা মানুষের ঢল আঁছড়ে পড়ল কলকাতার বিগ্রেডে।

ব্যাপক বৃষ্টির মধ্যে লাখো মানুষের আগমন কলকাতার জনজীবনকে স্তব্ধ করে দিলো।

এদিন মহানগরীর মোড়ে মোড়ে ছিল তিন রঙা কাপড় দিয়ে মোড়া তোরণ। তার গায়ে লাগানো মমতা ব্যানার্জির ছবি লাগানো ডিজিটাল ব্যানার। কলকাতা জুড়ে ব্যাপক যানজট। শহরের প্রবেশে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে একের পর এক মিছিল এদিন ছিল বিগ্রেড অভিমুখে।

ঘড়ির কাঁটায় তখন ১২টা ৫ মিনিট। ব্রিগেডের মঞ্চে তখন বিধায়ক অনুপ ঘোষাল গান ধরেছেন, ‘মুক্তির মন্দির সোঁপান তলে’। এরপরেই বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের নৃত্য পরিবেশন। পাল্লা দিয়ে সাংসদ শতাব্দী রায়ও ধিতাং ধিতাং বোলের সুরে লাখো মানুষের সামনে নাচলেন।

এদিনেরর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সব মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, জেলা পরিষদের সদস্য থেকে শুরু করে টলিউডের এক ঝাঁক তারকা এবং সংস্কৃতি জগতে প্রতিনিধিরা। এসেছিলেন বলিউডের সাবেক নায়ক বিশ্বজিৎ, ছিলেন  চিত্রকর যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন, সমীর আইচ। টলিউডের চিত্রতারকা দেব, তাপস পাল, সুপ্রিয়া দেবী, সন্ধ্যা রায়, দীপঙ্কর দে, রঞ্জিত মল্লিক, জুন মালিয়া, গায়ক নচীকেতা প্রমুখ।

মূল মঞ্চের পাশের মঞ্চে বসেছিলেন বামফ্রন্ট আমলে গণ-আন্দোলনের শহীদ পরিবার থেকে আসা মানুষজন।

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ১টায় শুরু হয় এদিনের মূল অনুষ্ঠান বিশিষ্ট সাংবাদিক কুনাল ঘোষের পরিচালনায়। এদিন তিনি তৃণমুলের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘তৃণমুল যুবা’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য এদিন কিন্তু তৃণমুলের পক্ষ থেকে কোনো নেতাই বক্তব্য রাখেননি।

দুপুর ১টা ২০ মিনিটে প্রবল হর্ষধ্বনি ও স্লোগানের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সব অতিথিদের আকাশী রঙের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। শহিদ পরিবারের মানুষজনের কথাও বলেন তিনি।

প্রবীণ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর পা ছুঁয়ে নমস্কার করে তিনি তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। এদিনের বক্তব্যে মমতা সরকারের দু’মাসের কাজের সাফল্য তুলে ধরেন দূরদূরান্ত থেকে আসা সমর্থকদের কাছে।

সিপিএমের প্রবল সমালোচনা করে বলেন, ‘এবার আপনারা ১০টা বছর ঘুমান। কথা বলবেন না। দেখুন আমরা কী করি। বাধা দিতে আসবেন না। ’

এদিন তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন,‘আমরা লড়াই করেছি, কিন্তু জয় এনে দিয়েছেন আপনারা। তাই, এবারের শহীদ দিবস আমরা উৎসর্গ করছি বাংলার মা-মাটি-মানুষকে। ’

তিনি বলেন, ‘কাজ কিছুই হয়নি, এখন অনেক বাকি। মাত্র দু’মাস আমাদের সরকার হয়েছে। এই দুটো মাসের মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার থেকে অনেক বেশি কাজ আমরা করেছি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ৩৫ বছরেও এরকম কাজ ওরা করতে পারেনি। ’

মমতা বলেন, সব শহীদ পরিবারের মানুষজনের পরিবারকে আমি চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। যারা বাকি আছেন তারও পাবেন। ’

এদিন তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল পাহাড় ঠিক করব, চুক্তি হয়ে গেছে ২ মাসের মধ্যে। জঙ্গলমহল, সিঙ্গুরের জমিও আমরা ফিরিয়ে দেব। আর ছিটমহলের সমস্যা আমরা সমাধান করব। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু। ’

 এরপর তিনি বলেন, ‘গতকাল আমরা ৫২ জন রাজবন্দিকে মুক্তি দেবার কথা বলেছি। আজ বলছি যারা সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ে গণআন্দোলন করে জেলে গেছেন বা মামলা হয়েছে, সবার মামলা প্রত্যাহার করা হবে। ’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা-তোমরা লড়াই নয়, উন্নয়নের কাজ করবেন আপনারা। মাটির রাস্তায় গ্রামে ইট লাগাবে আমার ছাত্র-যুবরা। আপনারা দেখবেন হাসপাতাল থেকে সব কিছু কাজ হচ্ছে কি না, প্রয়োজনে নিজেদের সব ঠিক করতে হবে। তিন বছরের মধ্যে সব গ্রামে বিদ্যুৎ যাবে। ’

‘সিপিএম বিরোধিতা করবে, করুক। ওদের গায়ে হাত দেবেন না,’ এদিন সমর্থকদের বলেন তিনি।

সিপিএমের সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘কোথায় সন্ত্রাস? আকাশ থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে, না দূরবীন দিয়ে দেখতে হচ্ছে। যারা ৩০ বছর ধরে বাংলার সন্ত্রাস করেছে তাদের কাছে আমার জ্ঞান শোনার দরকার নেই। ’

সবাইকে পবিত্র রমজানের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই ভাল থাকবেন। আমরা রোজা করব। আমাদের মুসলিম ভাই-বোনেদের সঙ্গে আমাদেরকেও রোজা করতে হবে। আমি তো রোজা করি। রোজা করলে শরীর ভাল হয়। সবাই এবার রোজা করুন। ’

এদিন তিনি জানান, রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষ অনুষ্ঠান ৭ থেকে ৯ আগস্ট রাজ্য সরকার পালন করবে।

রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সাফল্যে দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের বেতন ১ তারিখে পাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের দুই লাখ তিন হাজার রুপির দেনায় ফেলে দিয়ে গেছে বামফ্রন্ট। তাও আমরা চেষ্ঠা করছি। হাসপাতালেগুলিতে মাত্র দু’মাসে সাড়ে ৩ হাজার শয্যা বাড়িয়েছি। আমরা ৪৬ হাজার শিক্ষক নেব। পুলিশকে আধুনিকায়ন করব। ’

‘এমন চাকরির সুযোগ করব যে এই বাংলা থেকে আর কেউ বাইরে যাবে না’, বলেন মমতা। এতদিন ধরে যে রাজ্যবাসীর কাছে তিনি পরিবর্তনের আবেদন রেখেছিলেন এইদিনে প্রতিশ্রুতি রাখতে সেই সমর্থকদের কাছেই ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার আবেদন রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ভারতীয় সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।