ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

দার্জিলিং ভাগ হচ্ছে না!

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১১
দার্জিলিং ভাগ হচ্ছে না!

পিনটেল ভিলেজ. সুকনা (দার্জিলিং): দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে সোমবার ত্রিপাক্ষীয় চুক্তির মধ্যে দিয়ে গঠিত হল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। বিকাল ৩টায় পিনটেল ভিলেজ সংলগ্ন প্রাঙ্গণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরং, দার্জিলিং এর সাংসদ যশবন্ত সিনহা প্রমুখের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয় এই ঐতিহাসিক চুক্তি।



এদিন এই চুক্তিটি সাক্ষর করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম, জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশান গিরি ও ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব কে কে পাঠক।

পিনটেল ভিলেজে ছিল সাজ সাজ রব। পাহাড়ের প্রশাসনের দার্জিলিং হিল কাউন্সিলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে সোমবার থেকে এখানেই ঐতিহাসিক চুক্তির মধ্যে দিয়ে তৈরি হল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন । চুক্তিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।

হাজার গোর্খা ভাষাভাষী মানুষ এদিন ভীড় জমান পিনটেল ভিলেজ প্রাঙ্গণে। এসেছিলেন শিলিগুড়ি থেকে সমতলের অসংখ্য মানুষ। নাচ, গান করে তারা স্বাগত জানান মমতা ব্যানার্জিকে। এদিন গোর্খা মানুষজন প্রথাগত পোশাক পরে অনুষ্ঠানে আসেন।

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক তিনটেয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে নেপালি ‘খাদা’(গামছা) পরিয়ে উপস্থিত অতিথিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মঞ্চে মমতা ব্যানার্জির দুপাশে বসেছিলেন পি চিদাম্বরম ও বিমল গুরং।

রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,
‘আজ এই ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সাক্ষরিত হবে। ’

বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিমল গুরং বলেন, ‘বামফ্রন্ট সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এই চুক্তি আগেই স্বাক্ষরিত হত। মুখ্যমন্ত্রী ও ভারত সরকারকে ধন্যবাদ তারা আমাদের ডাকে সাড়া  দিয়েছেন। এবার তরাই ও ডুর্য়াস নিয়ে আলোচনা হবে। ’

পি চিদাম্বরম বলেন, ‘ভারত বহু ভাষাভাষী দেশ। বিচ্ছিন্নতাবাদী মানুষের উচিত বিভেদ ভুলে এগিয়ে আসা। ভারতের ঐতিহ্য রক্ষা করুন। আমরা ভারতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে আপনাদের সহায়তা করব। আজ একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত। ’

এরপর তিনটে ২২ মিনিটে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বহুদিন লড়াইয়ের পরে আপনারা প্রাপ্য পেলেন। বাংলা ভাগ হচ্ছে না। একটা ভাষার মানুষকে স্বীকৃতি দেওয়া হল। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং ভাই ভাই। আমি একে সুইজারল্যান্ড বানাবো। ’

তিনি দার্জিলিংয়ের উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা করে বলেন, ‘নেপালিভাষার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র, হসপিটাল ও ট্যুরিজমকেন্দ্র, চা-সিঙ্কনার রিসার্চকেন্দ্র, সেচের ব্যবস্থা, কৃষিজাত দ্রব্য সুরক্ষার ব্যবস্থা, যুবক-যুবতীদের কাজের ব্যবস্থা করবো। অন্যান্য প্রকল্পের গোর্খা মানুষেরা কাজ করুন। তাদের পেছনে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। ৬ মাসের মধ্যে কাজ শুরু করবে জিটিএ। ’

এদিকে, অনুষ্ঠান শেষ হবার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের মোর্চা নেতা বিমল গুরং বলেন,
‘এটা প্রথম ধাপ। গোর্খাল্যান্ড আমাদের মনে। এই দাবি আমাদের থাকবেই। ’

চুক্তির কোনও কপি এদিন সাংবাদিকের দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক একটি সূত্রে জানা গেছে, এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, স্বাক্ষরের পর এর জন্য আইন প্রণয়ন করা হবে। বিধানসভায় তা পাস করা হবে। এরপর হবে এলাকা পুনর্বিন্যাস ও নির্বাচনের প্রস্তুতি।

পরিকাঠামো সর্ম্পকে বলা হয়েছে, ৫০ জনের পরিষদ, এর মধ্যে ৪৫ জন হবেন নির্বাচিত আর ৫ জনকে মনোনীত করবেন রাজ্যপাল। এই পরিষদের সাধারণ সভা পরিচালনার জন্য থাকছে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ ও দৈনিক কাজ পরিচালনায় ১১ সদস্যর নির্বাহী পরিষদ।

এই অথরিটির অধিকারে থাকবে ৫২টি সরকারি বিভাগ যা এতদিন রাজ্য সরকারের অধিকারে ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, পূর্ত,সেচ, পর্যটন ইত্যাদি। ভূমি রাজস্ব বাদে অন্যান্য কর আদায় করবে প্রশাসন।

রাজ্য সরকারের আইনের অধীনে বিধি প্রণয়ন ও স্বাধীন পরিকল্পনা গ্রহণসহ বাস্তবায়নের অধিকার থাকছে অথরিটির হাতে। রাজ্য ও কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াও নিজস্ব কর আদায় করতে পারবে তারা। আগামী ৩ বছর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ২০০ কোটি রুপি করে প্রতি বছর দেওয়া হবে।

এদিকে এই চুক্তির বিরোধিতা করে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সমর্থনে ৪৮ ঘন্টার পাহাড় বনধের ডাক দিয়েছে বাংলা ও বাংলা বাঁচাও কমিটি সহ কয়েকটি সংগঠন।

এদিন চম্পামারিতে চুক্তির বিরোধিতায় সড়ক অবরোধ করা হয়। এখন থেকে গাড়ি ভাঙার অভিযোগে ৪জন হরতাল সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বামফ্রন্টের শরিক দল আরএসপি এদিনটি ‘কালো দিবস’ রূপে পালন করে।
 
উল্লেখ্য, পাহাড়ে জিএনএলএফ নেতা সুভাষ ঘিসিংয়ের একছত্র নেতৃত্বের অবসান ঘটিয়ে গত ৪ বছর ধরে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয় বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসছিল না।

নির্বাচনের আগে মমতা ব্যানার্জি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে ১০০ দিনের মধ্যে পাহাড়ের সমস্যার সমাধান করবেন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি বৈঠকের পর সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসে।

ভারতীয় সময়: ১৬১০ ঘন্টা, জুলাই ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।