ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সিঙ্গুর নিয়ে টাটা-বামফ্রন্ট চুক্তি প্রকাশ করলেন না মমতা

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১১
সিঙ্গুর নিয়ে টাটা-বামফ্রন্ট চুক্তি প্রকাশ করলেন না মমতা

কলকাতা: নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ক্ষমতায় এলে টাটা শিল্প গোষ্ঠির সঙ্গে সিঙ্গুরে ন্যানো ছোট মোটর গাড়ি কারখানার জন্য সাবেক বামফ্রন্ট সরকারের চুক্তিটি প্রকাশ্যে আনবেন। বিরোধীদলে থাকাকালীন এই চুক্তিটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি।

এবার মুখ্যমন্ত্রী হবার পর বৃহস্পতিবার চুক্তিটি প্রকাশ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হল না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের এই খবর দিয়ে বলেন, ‘ আজ প্রকাশ হচ্ছে না সিঙ্গুর চুক্তি। এই চুক্তিটি প্রকাশ করলে আইনি জটিলতা তৈরি হবে। ’

আইনি জটিলতার কারণ জানাতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘স্টাডি করতে সময় লাগবে। আমাকে একটু সময় দিন। তবে এখনই বলা যাবে না কবে চুক্তিটি প্রকাশ করা হবে। ’

বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বুধবার মমতা ব্যনার্জি বলেছিলেন, ‘আমি সব কাগজপত্র দেখেছি। শিল্পমন্ত্রী পার্থদা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। কাল সব কাগজপত্র সরকারীভাবে সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ’

‘আই হ্যাভ নো ট্রেড সিক্রেট। আগে কে, কী বলেছে জানি না। এটা আমার পুরনো প্রতিশ্রুতি। মানুষের কাছে আমি দায়বদ্ধ। তাই চুক্তি প্রকাশ করা হবে,’ এও বলেছিলেন মমতা।

এদিন তিনি আ্বারও বলেছিলেন, ‘সিঙ্গুরের যাদের জমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেই ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে তাদের। এটা রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত। কী ভাবে ওই জমি ফিরিয়ে দেব, তার কাজ শুরু করেছি। সব দিক দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘

উল্লেখ্য, এর আগে যতবারই তৎকালীন বিরোধীরা এই চুক্তিটি দেখতে চাইত বামফ্রন্টের শিল্পমন্ত্রী নিরূপম সেন বলতেন, আমরা চুক্তিটি দেখাতে চাইলেও, টাটারা রাজী নন। তাদের যুক্তি, ব্যবসায়িক কারণে এই চুক্তি সামনে আনা যাবে না।

এরপর প্রবল চাপের মুখে পড়ে বাম সরকার এই কারখানা জন্য কী সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন তা প্রকাশ করেন। যদিও শোনা যায় এতেও নাকি আপত্তি ছিল টাটাদের।

বিধানসভায় নিরূপম সেন জানান, মূল কারখানার জমির জন্য টাটারা কোনও সেলামি দেয়নি। তার বদলে লিজের ভাড়া হিসাবে প্রতি একরে বছরে ১৫ হাজার রুপি দেবে তারা। প্রথম পাঁচ বছর এই ব্যবস্থা চলবে।

 ৫ থেকে ৩০ বছরে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ২৫শতাংশ হারে এবং ৩০ থেকে ৬০ বছরে প্রতি দশ বছর অন্তর ৩০ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়বে। এর পর ৬০ থেকে ৯০ বছরে প্রতি বছর ২০ কোটি রুপি করে ভাড়া দেবে টাটারা।

এই লিজের মেয়াদ ৯০ বছর।

টাটা মোটরসের সহযোগী সংস্থাগুলি প্রথম ৪৫ বছরের জন্য প্রতি একরে ৮ হাজার রুপি করে ভাড়া দেবে। বাকি ৪৫ বছরের জন্য দেবে ১৬ হাজার রুপি।

বাজার থেকে টাকা তুলে মাত্র ১ শতাংশ সুদে টাটাদের ২০০ কোটি রুপি ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ভ্যাটের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

তৃণমুলের পক্ষ থেকে চুক্তি গোপন করা হচ্ছিল বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আসলে আইনি জটিলতার কারণেই তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়, যা এদিন শিল্পমন্ত্রীর কথা স্পষ্ট হয়েছে।

টাটারা এই চুক্তি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এরপর কলকাতা হাইকোর্ট থেকে এই চুক্তি প্রকাশ করা যাবে না বলে স্থগিত আদেশ জারি করা হয়। তা এখনও বলবৎ আছে।

অন্য দিকে, জানা গেছে বামফ্রন্ট আমলের সাবেক ভূমি ও রাজস্বমন্ত্রী এবং বরাবরই টাটাদের জমি দেওয়ার বিরোধী সিপিএম নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লা ফোন করে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন।

এরই মধ্যেই ভোটের আগে ও পরে তার সিপিএমবিরোধী মন্তব্যের জন্য তাকে সিপিএম থেকে সর্তক করা হয়েছে।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য এবারও ভোটে জেতা প্রবীণ এই কৃষকনেতা এবার নতুন করে কী বলেন তা জানার জন্য উৎসুক রাজনৈতিক মহল।

ভারতীয় সময়: ১৫৩০ ঘন্টা, মে ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।