ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন

ফলাফলের পূর্বাভাস নিয়ে কলকাতায় অস্থিরতা

রক্তিম দাশ ও আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১১
ফলাফলের পূর্বাভাস নিয়ে কলকাতায় অস্থিরতা

কলকাতা থেকে: পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে শুক্রবার। তবে সেদিন পর্যন্ত কেউ অপেক্ষা করতে রাজি হচ্ছে না! কলকাতাকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এরই মধ্যে নির্বাচনের ‘ফল আউট’ বলে ঘোষণা দেওয়া শুরু করেছে।



কোন দল কত আসন পাচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট করেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও একে সংবাদমাধ্যমে এই সংখ্যাটা একেক রকম। ‘বুথফেরত সমীক্ষা’ নামের এসব ফল প্রকাশের বিষয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সরকার ও বিরোধী-- দুই রাজনৈতিক শিবিরেই অস্থিরতা।  

পশ্চিমবঙ্গে শেষ দফার নির্বাচন মঙ্গলবার শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ফলাফল নিয়ে আলোচনা। সন্ধ্যার পর থেকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অবিরাম তাদের মতো করে পূর্বাভাস জানাতে থাকে। এদের মধ্যে কেউ ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টকে জয়ী, আবার কেউ মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটকে জয়ী হিসেবে চিহ্নিত করছে।

বামফ্রন্ট জয়ী হলে হবে প্রত্যাবর্তন; আর তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় এলে হবে পরিবর্তন।

বুধবার সকাল থেকেই কলকাতা শহরের ফুটপাতে পত্রিকার দোকান, চায়ের স্টলসহ বিভিন্ন মহলে পূর্বাভাস নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ ফলের পূর্বাভাস নিয়ে অস্থিরতাও দেখা যায়।

বুথফেরত সমীক্ষার নামে এভাবে ফলাফল ঘোষণা প্রসঙ্গে রাজ্য বামফ্রন্টের সভাপতি বিমান বসু সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব সমীক্ষার সারবত্তা মেলে না। ’  

তিনি বলেন, ‘অতীতেও এধরনের মতামত সমীক্ষা (ওপিনিয়ন পোল) বা বুথফেরত সমীক্ষা (এক্সিট পোল)’র মনগড়া ফলাফলের সঙ্গে কিছু সংবাদমাধ্যমের পতম্মন্য ব্যক্তিদের ‘জ্ঞানগর্ভ’ বক্তব্যকে অসার প্রমাণিত করেছেন রাজ্যের মানুষ। ’

এ প্রসঙ্গে কালীঘাটে নিজ বাড়িতে মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের কাছে সতর্ক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত ফল জানা যাবে ১৩ মে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। তবে রায় যাই হোক, আমরা যেন সকলে তা মাথা পেতে নেই। ’  
 
বুথ ফেরত এসব সমীক্ষায় ‘বিজ্ঞানসম্মত’ উপায় ভোটারদের মনোভাব জানার প্রয়াস চালানো হয়। ভোটারদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়। যার ভিত্তিতেই একটি সম্ভাব্য ফল অনুমান করা হয়।

তবে সব কেন্দ্র থেকেই জনমত সংগ্রহ করা হয় না। বাছাই করে দু’একটি বুথের মতামত দিয়েই পুরো কেন্দ্রে কে জয়ী হচ্ছে তা ঘোষণা করছে সংবাদ মাধ্যমগুলো।  

এসব ফল ঘোষণার জন্য সংবাদ মাধ্যমগুলো অবশ্য বেসরকারি জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়।

বুথফেরত সমীক্ষা জরিপের ফল প্রকাশ প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় বুধবার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল কখনো মিলেছে, কখনো মেলেনি। এ ধরনের সমীক্ষাকে বৈজ্ঞানিক নিয়মনীতির মধ্যে আনা খুবই কঠিন। ’

তিনি বলেন, ‘প্রথমত, খুবই কম নমুনা নিয়ে, কম পরিধির মধ্যে এই সমীক্ষা করা হয়।

 জানা যাচ্ছে, এবারে একটি কেন্দ্রে মাত্র ৮০জন ভোটারের মত নেওয়া হয়েছে। ২/৩ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৮০ জনের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত ফলাফলে যাওয়া অসম্ভব!’

অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সব মিলিয়ে বুথ ফেরত সমীক্ষাকে খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৯, ২০০১, ২০০৪ এমনকি ২০০৬ কোনোবারেই মেলেনি সংবাদমাধ্যমের এই জাতীয় সমীক্ষার ফল। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।