ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতার সম্মতিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৪
মমতার সম্মতিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছবি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ঢাকা: অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল। শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতির নিরসন হওয়ায় সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে নিলেন ।

তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুরের একটি হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের অবস্থান পরিবর্তনের কথা জানালেন। এ সময় তিনি জানিয়ে দেন, জোর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন এক জন জেলা প্রশাসক ও পাঁচ জেলার এসপিকে সরানোর যে নির্দেশ দিয়েছে, তা তিনি মেনে নিচ্ছেন।
এদিকে বুধবার সকালেই বদলি কার্যকর করা হবে বলে সচিবালয় সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিয়েছেন ভোট চুকলেই ওই সব অফিসারেরা নিজের নিজের পদে ফিরে আসবেন।

চলতি ভোট শেষ হবে ১২ মে। আর ফল প্রকাশিত হবে ১৬ মে। এ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তৃণমূল সুপ্রিমোসহ জেলা প্রশাসক ও পাঁচ জেলার এসপিকে।

এরআগে সোমবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আসে ওই কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ। কমিশনের নির্দেশ শুনেই  মুখ্যমন্ত্রী ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ওই নির্দেশ মানবেন না। প্রয়োজনে তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত। কোনও অফিসারকে সরানো হবে না।

কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানানো হয় কমিশনের সদর দফতর দিল্লিতে। মঙ্গলবার সকালেই দিল্লিতে মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি পৌঁছ‍ায় । দুপুরে জরুরী বৈঠকে বসে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। বিকেলে তারা জানিয়ে দেয়, মমতা সরকারের আর্জি তারা মানছে না।

কমিশন সূত্রে কড়া ইঙ্গিত মেলে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে অফিসার বদলের সিদ্ধান্ত কার্যকর না-হলে পশ্চিমবঙ্গে ভোট স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে। এতে যে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে, তার দায়ও যে রাজ্য সরকারের উপরে বর্তাবে সেটাও আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় কমিশন।

দিল্লি থেকে কমিশনের জবাবি চিঠি সচিবালয়ে পৌঁছানোর পরেই মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে বসেন। সেখানেই ঠিক হয়, কমিশনের নির্দেশ মেনে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানানো হবে। সেই মতো টেলিফোনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন শীর্ষ সচিবরা।

মমতা ব্যানার্জি ঘণ্টা দুয়েক পরেই মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ দুর্গাপুরে কমিশনের নির্দেশ মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। বলেন, “আই রেসপেক্ট দ্য কনস্টিটিউশনাল বডি (আমি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করি)। কনস্টিটিউশনাল অবলিগেশন (সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা) বলে আমি মেনে নিলাম। ”
মানতে যে তাঁকে হবে, সেটা মমতা এ দিন শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলেন। সোমবার তিনি ‘কমিশনকে কেয়ার করি না’ বলে তোপ দাগার পরেই দল ও প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে বোঝান, কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই।

না-হলে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেবে, যার দায় বর্তাবে রাজ্য সরকারের উপর। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী আইনজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেন। সেখানেও পরিষ্কার হয়, কমিশনের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও লাভ নেই।

পরে মমতার নিজের কথাতেও এই বাস্তবটা প্রকাশ পায়। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোর্ট কেস নেবে না। কিন্তু আমরা গেলেই জাস্টিস পাব। কনস্টিটিউশনাল বডি বলেই যা খুশি করা যায় না। আফটার ইলেকশন, ইট উইল বি আ বিগ ইস্যু। ”

মুখ্যমন্ত্রী মমতার ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনি বাস্তবটা বুঝতে পেরেই মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে পুরুলিয়া, পরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সভায় সুর নরম করেন । সোমবার তিনি যে রকম রণং দেহি মূর্তি নিয়েছিলেন, তার ঝাঁঝ বেশ খানিকটা কমিয়ে তিনি বলেন, “দিল্লির ধমকানো চমকানো সহ্য করতে রাজি নই। বাংলার অসম্মান দেখতে পারব না। ”

মমতা অভিযোগ করেন, “কংগ্রেসকে জেতানোর জন্য অফিসার বদল করা হচ্ছে। এখানে কোনও দাঙ্গা হয়নি। রাজনৈতিক হিংসাও নেই। এগুলো সত্যি হলে আমার আপত্তি ছিল না। একজন জানতেই পারছে না, তার কী অপরাধ! অথচ তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল!”
মুখ্যমন্ত্রী যখন এ দিন জনসভা করছেন, তখন সচিবালয় ও দিল্লিতে তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। এ দিন সকালেই অফিসার বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠান মুখ্যসচিব। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তকেও।

মুখ্যসচিবের চিঠি পেয়ে দিল্লিতে নির্বাচন সদনে দীর্ঘ বৈঠক করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত এবং রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসি। তার পর বিকেলে চিঠির জবাব পাঠিয়ে কমিশন জানায়, আর্জি মানা হচ্ছে না।

প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই ওই সব অফিসারকে বদলি করতে বলা হয়েছে। কমিশনের মুখপাত্র ধীরেন্দ্র ওঝা পরে বলেন, “রাজ্য যে ব্যাখ্যা চেয়েছিল, কমিশন তার জবাব দিয়েছে। কমিশন চায়, অবিলম্বে বদলির নির্দেশ কার্যকর করা হোক। ” কমিশনের জবাব নিয়ে মুখ্যসচিব অবশ্য প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তিনি শুধু বলেন, “এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। ”

সংঘাতের পথ বদলে মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে সন্ধির রাস্তা নেওয়ায় বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত বদলের আগেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলে রেখেছিলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অকথা-কুকথা বলেছিলেন।

কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে ধমকে-চমকে যে কিছু করানো যায় না, বুঝতে পারবেন!” আর সিদ্ধান্ত বদলের পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর প্রতিক্রিয়া, “আমরা তো আগেই বলেছিলাম, তাঁর বক্তব্য সংবিধান বহির্ভূত, এক্তিয়ারের বাইরে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছেন। ওঁদের দৌড় কত দূর, আবার বোঝা গেল!”

প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী তো নিজে থেকে মানেননি। এখন কমিশন ওঁদের বক্তব্য খারিজ করায় মানতে বাধ্য হয়েছেন! এর পরেও না মানলে যে পরিণতি হতো, সেটা আন্দাজ করেই পিছিয়ে এসেছেন!”
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।