ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ফান্দে পড়িয়া প্রিয়াঙ্কা কান্দে

অমিত বসু, কলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৪
ফান্দে পড়িয়া প্রিয়াঙ্কা কান্দে

রাহুল-প্রিয়াঙ্কা পিঠাপিঠি ভাইবোন। এক বছরের ছোটবড়।

রাহুল ৪৩, প্রিয়াঙ্কা ৪২। দু’জন দু’রকম। রাহুল চেয়েছিল লাইফটা নিজের মতো এনজয় করতে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। কিছুদিন চাকুরিও করেছে। আবার প্রেমে হাবুডুবুও খেয়েছেন। স্প্যানিস মেয়ে ভেরেনিকাকে দেখেই মুগ্ধ। লাভ অ্যাট ফাস্ট সাইট। একসঙ্গে থাকা, ঘুরে বেড়ানো। মা সোনিয়া গান্ধী ক্ষুব্ধ। যে ভুল তিনি করেছেন, ছেলে একই ভুল কাজ করবে কেন? রাজীব গান্ধীর বিদেশিনী স্ত্রী হয়ে ঝক্কি তো কম পোহাতে হয়নি। ছেলেও যদি বিদেশিনীর পাণিগ্রহণ করে, পাবলিক কি ছেড়ে দেবে? রাজনীতিতে ঝড় উঠবে। গান্ধী পরিবারের ইমেজ ভেঙ্গেও পড়তে পারে। তাই সময় থাকতেই প্রেমিকা ছাঁটাই করাই উত্তম। রাহুল একা। কষ্ট তো হবেই। কী করা যাবে। রাজনীতি মানেই ত্যাগ। তাতে যে আগ্রহ নেই রাহুলের।   মাকে সাফ কথা, আর যাই করি, রাজনীতিতে কক্ষনো না। মাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। বাঁকা লেজ সোজা করতে জানেন।

চেন্নাই থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শ্রীপেরামবুদুরে  ১৯৯১-এর ২১ মে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে রাজীব গান্ধীর মৃত্যু সোনিয়াকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল। রাহুলের বয়স তখন মাত্র ১৯, প্রিয়াঙ্কা ১৮ । ছেলেমেয়ে দুটাকে বুকে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন বাকী জীবন। তা কী করে হয়। কংগ্রেস তাঁকে ছাড়বে কেন? তিনি ছাড়া কংগ্রেসের হাল ধরবে কে? সোনিয়া সাত বছর সময় নিয়েছেন। বিজেপির বাড়বাড়ন্ত দেখে কংগ্রেস সভানেত্রী হতে বাধ্য হয়েছেন। রাহুল নরম হতে বাধ্য। ত‍াঁকে পাশে চেয়েছে সবসময়। ধীরে ধীরে রাজনীতি রপ্ত করতে সাহায্য করেছেন। প্রিয়াঙ্কা ঠিক উল্টো, জেদি একরোখা। দাদী ইন্দিরা গান্ধীর স্বভাব তাঁর শিরায় শিরায়। নিজে যা ভাল বুঝবেন তাই করবেন। অন্যের শাসন মানা ধাতে নেই। রবার্ট ভাদরাকে বিয়ে করতে বারণ করেছিলেন সোনিয়া। শোনেননি প্রিয়াঙ্কা।

প্রিয়াঙ্কার বয়স যখন পাঁচ তখন থেকেই বড় হয়ে ইন্দিরা হওয়ার স্বপ্ন। বাবা রাজীব গান্ধী যখন রাজনীতির কথা শুনলে ভয়ে সিঁটিয়ে যেতেন, তখনও প্রিয়াঙ্কার রোল মডেল ইন্দিরা। পরে প্রিয়াঙ্কার মধ্যেই ইন্দিরার ছায়া দেখেছে। নাছোড়বান্দা প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা কঠিন ছিল। এখনও তাই।

২০০৪ -এ লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মা সোনিয়ার সঙ্গে মঞ্চে দাঁড়ানোর কথা ছিল প্রিয়াঙ্কার। তাঁকে দেখার জন্য উৎসুক ছিল জনতা। সোনিয়া প্রিয়াঙ্কাকে ছাড়া একা এসে মঞ্চে দাঁড়ানোর ক্ষোভে ব্রিগেড ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। এবারও পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থীদের দাবী, প্রিয়াঙ্কাকে একবার অন্তত কলকাতায় আনা হোক। সে কথা কানে তোলেননি সোনিয়া। প্রিয়াঙ্কাকে আটকে রাখা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি আর রাবেরেলি কেন্দ্রে। দায়িত্বটা সংগঠনের। কিন্তু প্রচারে ক্যামেরার সামনে মুখ খোলার অনুমতি নেই। মঞ্চে দাঁড়ালেও বক্তৃতা করতে পারবেন না। প্রিয়াঙ্কার পাশে স্বামী রবার্টও থাকছেন পুতুলের মতো।  

আমেঠিতে প্রার্থী রাহুল, রাবেরেলিতে সোনিয়া। তার পাশে সুলতানপুর কেন্দ্রে প্রার্থী রাহুলের চাচাতো ভাই সঞ্জয় গান্ধীর পুত্র বরুণ গান্ধী। বরুণ নামের সঙ্গে জুড়ে রাখেন দাদা ফিরোজ গান্ধীর নাম। অফিসিয়ালি লিখেন বরুণ ফিরোজ গান্ধী। দিল্লীর ১০ জনপথের বাড়িতে ফিরোজের অস্তিত্ব নেই। বিস্মরণের গহ্বর থেকে তাঁকে তুলে এনেছেন বরুণ। এবারে প্রচারে বাবা সঞ্জয় গান্ধীকে প্রেজেন্ট করছেন। বারবার বলছেন বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই তিনি রাজনীতিতে। বিজেপি প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও ভুলেও নরেন্দ্র মোদীর নাম নিচ্ছেন না।

বরুণের প্রতিদ্বদ্ধী কংগ্রেসের অমিত্রা সিং। ২০০৯-এ জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী সঞ্জয় সিং তাঁর স্বামী। সঞ্জয় সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য হওয়ায় শূন্য আসনে প্রার্থী তাঁর স্ত্রী। আগেরবার উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস যে ২১টি আসন পেয়েছিল সুলতানপুর তার একটি। অমিত্রাকে হারানোর চ্যালেঞ্জ বরুণের। তাঁর এই আসনে দাঁড়ানোর কথা নয়। গতবার দাঁড়িয়েছিলেন সিলভিট কেন্দ্রে। এবার তাঁর মা মানেকা সেখানে প্রার্থী। সোনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে তাদের স্বজন এই মা ও ছেলে।

** ভোটের ভাটিয়ালি । । চটচটে চকোলেট

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।