ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ঋতব্রতকে প্রার্থী নিয়ে সিপিএম-এ কোন্দল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৪
ঋতব্রতকে প্রার্থী নিয়ে সিপিএম-এ কোন্দল

কলকাতা: রাজ্যসভায় সিপিএম প্রার্থী হলেন ছাত্র-নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও দলের অন্দরে কোন্দল মিটছে না কিছুতেই।

বরং এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
 
রাজ্যসভায় নতুন মুখ হিসাবে ঋতব্রতর মনোনয়নের পরে এ বার প্রশ্ন উঠেছে সিপিএমের মতো কমিউনিস্ট পার্টিতে উচ্চ বর্ণের প্রাধান্য নিয়ে। এ ব্যাপারে সকলের আগে সরব হয়েছেন দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা।

তাঁর বক্তব্য, বিদায়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে তারিণী রায় (কুচবিহারের জেলা সম্পাদক) ছিলেন রাজবংশীদের প্রতিনিধি। তারও আগে ফুরিয়ে গিয়েছে রাজ্যসভায় মইনুল হাসানের মেয়াদ।

এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় বামফ্রন্টের কোনও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি থাকছেন না। আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়কেও উপেক্ষা করা হয়েছে বলে রেজ্জাকের অভিযোগ।

বিষয়টি নিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে চিঠি দিতে চান সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য রেজ্জাক। দলের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, একমাত্র আসনে প্রার্থী দেওয়ার সময় সব মাপকাঠি পূরণ করা সম্ভব নয়।

রেজ্জাকের কথায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখন সংখ্যালঘু কোনও সংসদ সদস্য রাজ্যসভায় নেই। রাজ্য জুড়ে গ্রামে-গঞ্জে বামফ্রন্টের যে সব কর্মী-সমর্থকেরা শাসক দলের হাতে মার খাচ্ছেন, খুন হচ্ছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশই সংখ্যালঘু।

বাকি ২০ শতাংশ তফসিলি জাতি, উপজাতি-সহ পিছিয়ে পড়া মানুষ। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বের ভাবনাচিন্তা ব্রাহ্মণ্যবাদে আচ্ছন্ন রয়েছে! যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।  

ঋতব্রতকে প্রার্থী করার জন্য সিপিএমের অন্দরে প্রবল লড়াই করতে হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। ব্যক্তি ঋতব্রতকে নিয়ে কোনও সমস্যা না থাকলেও রেজ্জাক প্রকৃতপক্ষে নিশানা করতে চেয়েছেন বুদ্ধবাবুকেই।

দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলায় তাঁকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে পড়তে হবে কি না, তা নিয়ে রেজ্জাক আদৌ ভাবিত নন। ইতোমধ্যেই মুসলিম ও দলিতদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে সামাজিক মঞ্চের আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তিনি।

যদিও সিপিএম থেকে ওই ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলন কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠনেরই প্রশ্ন রয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বও রেজ্জাকের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের দিকে না গিয়ে তাঁর বক্তব্যের পাল্টা যুক্তিই পেশ করেছেন।

সিপিএমের প্রাক্তন সংসদ সদ্য মইনুলও বলেন, এ বার হয়নি। কিন্তু আগে হয়েছে। পরেও কখনও কোনও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি সুযোগ পাবেন না, তা তো ধরে নেওয়া যায় না!

শারীরিক কারণে নিজে আর প্রার্থী হতে না চেয়ে দলের মধ্যে ঋতব্রতর নাম প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন বিদায়ী সংসদ সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামলবাবুর বক্তব্য, নেতা উঠে আসে আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে।

কোনও পদে কাউকে বসিয়ে দিলেই সেই সম্প্রদায়ের ভাল হয় না। তা ছাড়া, এখানে প্রশ্নটা সংসদে প্রার্থী মনোনয়নের। সেখানে বলতে পারার ক্ষমতা, ভাষার দক্ষতা এগুলো বিচার্য বিষয়।

সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের যুক্তি, আগে যখন তাঁরা রাজ্যসভায় একসঙ্গে চার-পাঁচ জন সংসদ সদস্য পাঠাতে পারতেন, তখন বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ থাকত। কেরল থেকে ইতোমধ্যেই লোকসভায় পি কে বিজু, এম বি রাজেশ বা রাজ্যসভায় পি রাজীবের মতো তরুণ সংসদ সদস্যরা আছেন। সেই অর্থে ঋতব্রতর মনোনয়ন অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যুক্তি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।