ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

রাহুল গান্ধীর শাস্তি বহাল, আবেদন খারিজ গুজরাট হাইকোর্টে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
রাহুল গান্ধীর শাস্তি বহাল, আবেদন খারিজ গুজরাট হাইকোর্টে

কলকাতা: জনসভায় ‘সব মোদি চোর’ মন্তব্যের জেরে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে নিজের সাংসদ পদ হারিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনও দাখিল করেছিলেন।

তবে শুক্রবার (৭ জুলাই) তার সেই আবেদন খারিজ করে দিল গুজরাট হাইকোর্ট।

সিঙ্গেল বেঞ্চের লিখিত এই রায় পাওয়ার পর রাহুল গান্ধী গুজরাট হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করতে পারবেন। যদি সেখানেও খারিজ হয়ে যায়, তাহলে রাহুলের একমাত্র পথ খোলা থাকল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানেও মামলা খারিজ হলে, পূর্ব নির্দেশ অনুয়ায়ী, শাস্তি পেতে হবে রাহুল গান্ধীর। এরকমটা যদি হয় তাহলে ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বড় ধাক্কা খাবে জাতীয় কংগ্রেস ও তাদের নেতা রাহুল।

অপরাধমূলক মানহানির মামলায় গত ২৩ মার্চ রাহুল গান্ধীকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয় গুজরাট রাজ্যের সুরাটের নিম্ন আদালত। সুরাট আদালতের সেই সিদ্ধান্তের জেরে একদিন পরেই অর্থাৎ ২৪ মার্চ সাংসদ সদস্য পদ খোয়াতে হয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে। যদিও সাজা শোনানোর পরই রাহুলকে ৩০ দিনের জন্য শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চতর আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করারও সুযোগ পাবেন রাহুল।

পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুরাটের নগর-দায়রা আদালতে মামলা করেছিলেন রাহুল। গত ১৩ এপ্রিল মামলাটি ওঠে সুরাটের নগর-দায়রা আদালতে। ২০ এপ্রিল শুনানিতে রাহুলের দাবি ছিল, তার রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাবিত হয়ে অতিরিক্ত শাস্তি দিয়েছে নিম্ন আদালত। কিন্তু, নগর দায়রা আদালতের বিচারক পি মোগেরা. রাহুলকে কোনোরকম স্বস্তি দেননি। রাহুলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল নগর দায়রা আদালতও।

সেদিনই কংগ্রেসের পক্ষে ইঙ্গিত দিয়ে রাখা হয়েছিল, আরও উচ্চতর আদালতে মামলা দায়ের করবেন রাহুল। এরপরই ২৫ এপ্রিল গুজরাট হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশন দায়ের করেন কংগ্রেস নেতা তথা রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। সেই আবেদন শুক্রবার (৭ জুলাই) গুজরাট হাইকোর্টেও খারিজ করে গেল।

তবে নিম্ন আদালতের নির্দেশ গত ১৩ এপ্রিল সুরাটের নগর-দায়রা আদালতে বহাল থাকলেও সেদিনই রাহুল গান্ধীকে একটি বিষয়ে স্বস্তি দেওয়া হয়েছিল। জামিনের আবেদন নিয়ে চূড়ান্ত আইনি লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি মুক্ত অর্থাৎ, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। রাহুলেরও আদালতে আত্মসমর্পণ করার প্রয়োজন নেই।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটকের এক জনসভায় ‘সব মোদি চোর’ মন্তব্য করার জেরে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন রাহুল। ওই সালে কর্ণাটকের ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, দেখা যাচ্ছে যারাই দুর্নীতি করছেন তাদেরই পদবী মোদি। আইপিএলে লুট করেছিলেন ললিত মোদি। দেশ থেকে টাকা লুট করে পালিয়ে যান নীরব মোদি। আর যিনি তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন, তিনিও একজন মোদি (নরেন্দ্র মোদি)। করবে না কেন, সবাই তো একই রাজ্যের।

এরপরই গুজরাতের বিজেপির এক সাবেক বিধায়ক তথা বর্তমান সাংসদ সুরাটের নিম্ন আদালতে মামলা করেন। কারণ তারও পদবি মোদি। তিনি আদালতে বলেছিলেন, মোদি পদবীকে রাহুল গান্ধী অপমান করেছেন। সেদিন সশরীরে আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাহুল। বিচারকের চোখে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, সাজা ঘোষণার আগে রাহুলকে বিচারক জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার কিছু বলার আছে? আপনি কি অনুতপ্ত?

জবাবে রাহুল বলেছিলেন, রাজনীতির মঞ্চ থেকে রাজনীতির কথা বলেছি। এখানে অনুতাপের কোনো বিষয় নেই। মামলাকারীর আইনজীবী তখন আর্জি জানান, রাহুল গান্ধী একরোখা মনোভাব দেখাচ্ছেন। তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক। তারপরই বিচারক, জনপ্রিতিনিধি আইন অনুয়ায়ী, রাহুলকে দুবছরের কারাদণ্ডের সাজা শোনান।

ভারতের জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী, মোট ৮ বছর (২ বছর জেল, পরে আরও ৬ বছর) নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না রাহুল গান্ধী। ফলে আগামীতে ভারতের শীর্ষ আদালতও যদি রাহুলের শাস্তি বহাল রাখেন, সেক্ষেত্রে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এই কংগ্রেস নেতা। ফলে কংগ্রেস বড় ধাক্কা খাবে। একই সঙ্গে বড় হোঁচট খেতে চলেছে মমতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা মোদি বিরোধী ১৭ দলের রাজনৈতিক জোট।

কারণ, জাতীয়স্তরে দল হিসেবে একমাত্র বড় দল কংগ্রেস। বর্তমানে এরপরই আম আদমি পার্টি। কারণ দিল্লির পাশাপাশি পাঞ্জাবও তাদের দখলে। বাদবাকি দব দল আঞ্চলিক। আর এখন তো সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের তকমা হারিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমুল কংগ্রেস।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।