ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

করোনা বিরতির পর দেশের ক্রিকেটের বড় প্রাপ্তি

রিফাত আনজুম, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
করোনা বিরতির পর দেশের ক্রিকেটের বড় প্রাপ্তি বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে পেসারদের দাপট ছিল দেখার মতো, বাঁ থেকে সুমন খান, সাইফউদ্দিন, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান

করোনা ভাইরাসের কারণে মার্চ মাসে থমকে যায় দেশের ক্রিকেট। ২২ গজের পিচের সঙ্গে ব্যাটসম্যান আর বোলারদের সম্পর্কের ভাটা পড়ে যায়।

তবে দীর্ঘ সাত মাস বিরতির পর আবার মাঠ গড়িয়েছে ক্রিকেট। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ওয়ানডে টুর্নামেন্ট দিয়ে আবার ক্রিকেটাররা মাঠে ফিরেছেন। প্রশ্ন হলো দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফেরা দেশের ক্রিকেটের প্রাপ্তিটা কি?

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে মোট ৭টি ম্যাচ মাঠে গড়িয়েছে। এই ৭ ম্যাচের প্রতিটি ম্যাচেই ছিল পেসারদের দাপট। অন্যরকম একটা টুর্নামেন্ট দেখা গেল। পুরো টুর্নামেন্টে তিন দলের পেসাররা ছিলেন দারুণ ছন্দে। পরিসংখ্যানও তাই বলছে। ১২ উইকেট নিয়ে শীর্ষে পেসার মোহামদ সাইফউদ্দিন ও রুবেল হোসেন। ৯ উইকেট নিয়ে এর পর রয়েছেন পেসার সুমন খান। ৮ উইকেট নিয়ে পরের জায়গা মোস্তাফিজুর রহমানের, আল আমিন হোসেন ও এবাদত হোসেনের। ৭ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। শীর্ষ ১০ বোলারদের মধ্যে  আট জনই পেসার। তাই বলা যায় পেসারদের আধিপত্য এই টুর্নামেন্টের নতুন পাওয়া।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম মনে করেন পেসারদের খেলার সুযোগ করে দেওয়ায় এই ফল এসেছে। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন পেসাররা এতদিন ভালো করতে পারেননি, কেনই বা হঠাৎ করে পেসারদের  ভালো করা। জাতীয় দলের সাবেক এই বাঁহাতি মনে করেন পেসারদের জন্য উইকেট তৈরি করা হয় না বলেই পেসাররা ভালো করতে পারে না।

মঞ্জুরুল বলেন, 'সব সময় উইকেট পেসারদের পক্ষে থাকে না। টি-টোয়েন্টি বলেন, ওডিয়াই বলেন কিংবা টেস্ট, আমি কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের কথা বলছি না (বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ)। তবে পেস বোলাররা সবসময় ভালো বোলিং করে, কিন্তু রেজাল্ট আসে না কারণ উইকেটটা পক্ষে থাকে না এটা সত্য কথা। এই উপমহাদেশে স্পিন ট্র্যাক বানানো হয় বলেই স্পিনাররা ডিমিনেট করে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে লাস্ট ১০ বছরে পুরো বিশ্বে কোথাও পেস বোলাদের জন্য উইকেট বানানো হয়নি। যার কারণে পেসারদের জন্য বল করাটা কঠিন হয়ে গেছে। '

করোনার জন্য প্রায় সাত মাস ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন পেসাররা। এই দীর্ঘ বিরতির পর ফাস্ট বোলারদের এমন উন্নতি চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কেন এই রকম উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে এমন প্রশ্নে মঞ্জুরুল জানান, এই বিরতিতে পেসাররা কিন্তু বেশ পরিশ্রম করেছে। সবাই নিজের উদ্যেগে অনুশীলন করেছে বিধায় আজকের এই ফল। বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ আর রুবেল হোসেনের পরিবর্তন বেশ ইতিবাচক বলে মনে হয়েছে তার কাছে। পাশাপাশি ভালো লাইন ও লেন্থে বল করার কারণে সাফল্য পেয়েছেন।

তিনি বলেন, 'পেসারার অনেক দিন ধরে কিন্তু পরিশ্রম করছে। তাসকিন, রুবেল, মোস্তাফিজ সবাই কিন্তু অনেক পরিশ্রম করেছে। বিশেষ করে তাসকিনের কথা বলবো সে অনেক পরিশ্রম করেছে। সব কিছু মিলিয়ে পেসাররা সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং ভালো বোলিং করেছে। সঠিক জায়গার বল করেছে সেজন্য কিন্তু পেসাররা ভালো করেছে। তবে এটা বলবো না যে ব্যাটসম্যানরা খারাপ ব্যাটিং করেছে। '

বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটসম্যানদের নিয়েও কথা বলেন সাবেক এই পেসার। তিনি মনে করেন ব্যাটসম্যনরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠের বাইরে থাকায় ভালোভাবে খেলতে পারেননি। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ তিনি দেখছেন না। দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে নেমে ব্যাটসম্যানদের পারফর্ম করা কঠিন। জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যানরা তাদের ছন্দ খুঁজে পাবেন বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার।

মঞ্জুরুল বলেন, 'ব্যাটসম্যানদের কথা বলতে গেলে তারা কিন্তু কেউ রান করছে না, কারণ কেউ কিন্তু ম্যাচের মধ্যে নাই। ম্যাচের ভেতরে না থাকার কারণে এমনটা হয়েছে। আপনি যদি আইপিএলটা দেখেন প্রথম দিকে কোনো ব্যাটসম্যরা কিন্তু রান করতে পারছিল না। তিন থেকে চারটা ম্যাচের পর থেকে ব্যাটসম্যানরা রান করতে শুরু করেছে। লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম সবাই কিন্তু শুধুমাত্র দেশে নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পারফর্ম করে দেখিয়েছে। আমার মনে হয় ব্যাটসম্যানরা যদি আরও একটু বেশি ম্যাচ খেলে তখন ঠিক হয়ে যাবে। তবে সাবেক ফাস্ট বোলার হিসেবে বলবো যে এটা ভালো খবর যে বোলারার ভালো করছে, এটা বাংলাদেশ দলের জন্য ইতিবাচক। '

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের বড় প্রাপ্তি পেসারদের দাপট এটা বলাই যায়। এটা যে দেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন সেটা নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। তবে পেসারদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘন্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
আরএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।