সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এক বক্তব্য নিয়ে তোড়পাড় শুরু হয়েছে। তিনি দেশের বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর প্রত্যাশা ফেয়ার ইনক্লুসিভ নির্বাচন। হয়তো আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন হবে। তাঁর আর কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই।
তিনি বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ আছে। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে বিভেদ সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। তিনি ন্যায্য কথাই বলেছেন। ৫ আগস্টের আগে-পরে সংস্কার করে এক নতুন দেশ গড়ার লক্ষ্যে যে অটুট ঐক্য ছিল, এখন সে প্রত্যাশা অনেকটাই ম্লান।
রাজনৈতিক দলের মধ্যে জলদি ক্ষমতায় পা রাখার লড়াই আমরা দেখছি। সংস্কারের আগে নির্বাচন জরুরি বলে অনেক রাজনৈতিক দল মনে করছে। তাদের দাবি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে তারা সংস্কার করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ চায় আগে সংস্কার হোক, তারপর নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে প্রয়োজন হলে আরো সংস্কার করবে। ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল অপেক্ষা করতে চাইছে না।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূস দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রথম থেকেই তিনি সংস্কারের ওপর জোর দেন।
সেনাবাহিনী জাতির শেষ ভরসাস্থল। সেখানেও বিভেদ সৃষ্টি করে ফাটল ধরানো, মনোবল ভাঙার চেষ্টা চলছে। যারা কুটনামি করছে, তারা জাতির ক্ষতি করছে। বোধগম্য কারণেই জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে। তিনি স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণ রাজনীতিতে বিভেদ। জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, বিশৃঙ্খলা-সংঘর্ষ বন্ধ না হলে, কাদা ছোড়াছুড়ি করলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন আরেকজনের বিষোদগারে ব্যস্ত। দেশের রাজনীতিতে এটাই এখন দৃশ্যমান। স্বাভাবিকভাবেই সেনাপ্রধান সতর্ক করেছেন, নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে না পারলে আমরা বিপদে পড়তে পারি। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সঠিক কথাই তো বলেছেন। একজন সাহসী ও মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে দেশকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবেসে তিনি দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। শুধু নির্বাচন হলে সমাধান মিলবে না। গত দেড় যুগে এ দেশে ঘটে যাওয়া অবিচার, দুর্নীতি, অপশাসন থেকে মুক্তির জন্য কঠিন ও সাহসী ভূমিকাও রাখতে হবে। তা না হলে মুক্তি মিলবে না।
সেনাপ্রধান বলেছেন, কোনো সংস্থার নামে দুর্নাম ছড়ানো ঠিক না। পুলিশ, র্যাব, আনসার, ডিজিএফআই, এনএসআই, প্রশাসন—সব প্রতিষ্ঠানের মনোবল ভেঙে গেলে দেশ চলবে কী করে? কাজেই কোনো বাহিনীর নামে পাইকারি হারে বদনাম, বিরামহীন অপপ্রচার দেশের জন্য ক্ষতি। তারা অনেক ভালো কাজ করেছে। বাংলাদেশের গৌরব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি উন্নয়ন না করে সেনাবাহিনী সেনানিবাসে ফিরে গেলে দেশে অরাজকতা আরো বেড়ে যাবে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বর্তমান দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন। সেনাপ্রধানের কথাগুলো অপ্রিয় সত্য। যে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, সেই জাতিকে কোনো শক্তি পরাজিত করতে পারে না। সেনাপ্রধান দেশের গর্বিত ইতিহাস হয়ে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সামনে আরো অনেক কাজ বাকি। অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সময়োযোগী বক্তব্য দিয়েছেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সবার মনের কথা বলে দিয়েছেন। সবার আগে দেশ, সবাইকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। নষ্ট রাজনীতির ফাঁদে যেন পা না পড়ে।
গঠনমূলক উপদেশ, তা-ও হুমকি বলে চালাচ্ছে। এসব গুরুত্বহীন কথা সেনাবাহিনীর অবিচল পথচলা রুখতে পারবে না।
সেনাপ্রধানের সঙ্গে আছে দেশের মানুষ। তিনি হাত খুলে দেশের সেবা করুন।
লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৫
এসআই