ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ চৈত্র ১৪৩১, ২০ মার্চ ২০২৫, ১৯ রমজান ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

৯ মাস বেতন পাচ্ছেন না ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৫
৯ মাস বেতন পাচ্ছেন না ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারীরা

ফেনী: দীর্ঘ ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগকৃত কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে অনশন শুরু করেছেন।

বুধবার (১৯ মার্চ) ২টার সময় গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিছানা বিছিয়ে কেউ বসে আবার কেউ শুয়ে আছেন।

এরই মধ্যে অসুস্থ হয়েছে পড়েছেন কেউ কেউ।

গত কয়েকদিন কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাসহ ছোটখাটো কাজগুলো বন্ধ থাকায় রোগী ও স্বজনদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতাসহ নানা কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দ্রুত আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগকৃত জনবলের বেতন ভাতা পরিশোধ না করা হলে হাসপাতালের সেবাগ্রহীতাদের সমস্যাগুলো আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

এমতাবস্থায় কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়মিত করার দাবি জানিয়েছেন রোগী-স্বজন ও ভুক্তভোগীরা।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে মোট ৫৩ জন কর্মচারী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মচারী দিয়ে ডোম ও ডোম সহকারী, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, বাবুর্চি সহকারী, আয়া, মালি, দারোয়ান ও জরুরি বিভাগে কাজ করানো হয়ে থাকে।

প্রতিমাসে ঠিকাদারের মাধ্যমে তারা ১৫ হাজার টাকা হারে বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। কিন্তু ওই টাকাও গত ৯ মাস ধরে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও কর্মচারীরা রোগীদের সমস্যার কথা চিন্তা করে সেবা দিয়ে আসছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালে দেখা গেছে, বেতন ভাতা পাওয়ার দাবিতে আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারীরা প্রতিদিনই কয়েক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন। ফলে বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলো আগের মতো পরিচ্ছন্ন নেই। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে।

আয়া ও পরিচ্ছন্নতা-কর্মীরা ঠিক মতো কাজ করছেন না। পরিষ্কার না করায় বাথরুম ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে আছে। রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম দেখা যাচ্ছে।

আবদুল আজিজ নামের রোগীর এক স্বজন জানান, তার মাকে নিয়ে গত তিনদিন ধরে এ হাসপাতালে অবস্থান করছেন। এখানকার বাথরুমগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। যার কারণে ব্যবহার করা যায় না।

রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের বাইরে গিয়ে বাথরুমের কাজ সারতে পারলেও ভীষণ বেকায়দায় রয়েছেন চিকিৎসাধীন রোগীরা। আয়া ও ওয়ার্ডবয় হিসেবে দায়িত্বরতরা কাজ করতে চায় না। সহযোগিতা চাইলে বেতনের কথা বলে উল্টো ধমক দেয়।

রুবি নামের এক রোগী বলেন, এখানে টাকা ছাড়া কর্মচারীদের থেকে কোনো সেবাই পাওয়া যাচ্ছে না। বেতন পাচ্ছে না বলে রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন তারা। টাকা দিলে কাজ করে; টাকা না দিলে খারাপ আচরণ করেন।

ঝর্ণা রানী নামের আউটসোর্সিংয়ের কাজে নিয়োজিত এক কর্মচারী জানান, জুন মাসের পরে আর কোনো বেতন পাইনি। দীর্ঘ ৯ মাস বেতন না পেয়েও সংসারের ঘানি টানছি। ৫ মাসের বাসা ভাড়া বকেয়া পড়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছি। এভাবে কতদিন কাজ করা যাবে?

এ হাসপাতালে ২২ বছর যাবত কাজ করেন শৈলান দাশ। তিনি জানান, জুলাই মাসে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার সময় বাসাবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে বাসায় গিয়ে আর কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। বেতন না পাওয়ায় বাসায় আসবাবপত্র নিতে পারিনি।

শীতের কষ্ট থেকে বাঁচতে লেপ-তোশক পর্যন্ত কিনতে পারলাম না। অনেক দিন ধরে অসুস্থ। বেতনও পাচ্ছি না। তারপরও হাসপাতালে ক্লিনারের কাজ করে যাচ্ছি। রোগীদের থেকে কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল বলেন, বিষয়টির সুরাহার জন্য একাধিকবার ওপর মহলে চিঠি লেখা হয়েছে। জটিলতা নিরসন না হওয়ায় তাদের বেতনও চালু হচ্ছে না। এ বিষয়ে হাসপাতালের কিছু করার নেই। সিদ্ধান্ত নেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৫ 
এসএইচডি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।