মৌলভীবাজার: ধীরে ধীরে কাঁঠালের মৌসুম চলে আসছে। কাঁঠাল গাছের দিকে তাকালেই দেখা যায়, ডালের অংশে কিংবা কাণ্ডে গজিয়ে উঠেছে ফল সম্ভার।
আবার কোনো কোনো কাঁঠালগাছে দেখা যায় খুব কম ফলে ভরে উঠেছে। প্রকৃতিতে মানুষ এবং প্রাণিকুলের জন্য কাঁঠাল গাছের নিরন্তর এ প্রচেষ্টা সাংবাৎসরিক।
কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus এবং প্রচলিত ইংরেজি নাম জ্যাকফ্রুট (Jackfruit)। এটি হলুদ বর্ণের গ্রীষ্মকালীন সুমিষ্ট ফল। বাংলাদেশের ‘জাতীয় ফল’ কাঁঠাল। জাতীয় এই ফল খাদ্য হিসেবে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কাঁঠাল সবজি বা তরকারি হিসেবে অত্যন্ত সুস্বাদু – পরিপূর্ণ পাকা কাঁঠালের মতোই। কাঁচা কাঁঠালের কান্দা বা এঁচোড় সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী।
ভোজনরসিকদের কাছে কাঁচা বা পাকা সব কাঁঠালেরই চাহিদা ব্যাপক। পাকা কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর হলেও এর ব্যতিক্রমী গন্ধের জন্য অনেকের কাছে ততটা আকর্ষণীয় নয়। তারপরও মৃদু অম্লযুক্ত সুমিষ্ট স্বাদের হওয়ায় অনেকে খেতে খুব পছন্দ করেন। কাঁঠালের বীজগুলোকে শুকিয়ে বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে খাওয়া হয়। বিচিগুলো পিষে বাদাম, দারুচিনি, কিশমিশ মিশিয়ে মজাদার হালুয়া বানিয়েও খাওয়া হয়। তাছাড়া, হালকা ভেজে এমনি এমনিও খেতে দারুণ।
কাঁঠাল গাছে মাঝেমধ্যে দেখা যায়, কালো কালো ছোট কাঁঠাল! অনেকের মনেই বিস্ময়সূচক প্রশ্ন জাগে যে, এগুলো আসলে কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, কাঁঠালে পরাগায়ন হওয়ার জন্য দুই ধরনের ফুল লাগে। স্ত্রী ফুল এবং পুরুষ ফুল। পুরুষ ফুলগুলো ফোঁটার পরে কালো হয়ে পচে যায়। আর স্ত্রী ফুলগুলো যদি পুরুষ ফুলের কাছে থেকে পোলেনগ্যান (পরাগরেণু) রিসিভ করে পোলেনেশর (পরাগায়ন) হয় তখন সেটা কাঁঠাল হয়। পুরুষ ফুল থেকে পরাগ রেণুগুলো মহিলা ফুলের গর্ভমুন্ডে গিয়ে পড়ে। তখন পরাগায়ন হয়। পরাগায়নের পর সেই স্ত্রী ফুলটি ধীরে ধীরে কাঁঠালে রূপান্তরিত হয়।
তিনি আরও বলেন, কাঁঠাল হলো যৌগিক ফল। এখানে অনেকগুলো ফুল রয়েছে। ধরা যায় কম্পাউন্ড। মানে, এখানে অনেক ফুলের সমষ্টি। কাঁঠালের ভেতরে অনেক কোয়া থাকে। আর একেকটা কোয়া একেকটা ফুল থেকে এসেছে। সব একটা দণ্ডের চতুর্দিকে সাজানো থাকে। যেটা পরাগায়ন হয় না সেটা বীজ হয় না। মানে কোয়া হয় না।
ছোট কালো-কাঁঠাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ছোট কালো কালো যে ফুলগুলো পচে যাচ্ছে এটাকে ‘মুচি’ বলে। এগুলো কাঁঠালের মেইল ফ্লায়ার (পুরুষ ফুল)। এই মেইল ফ্লায়ার থেকে পরাগ রেণুগুলো স্ত্রী কাঁঠাল ফুলের গায়ে পড়ে। যেসব গর্ভমুণ্ডগুলো পরাগায়িত হয় সেখান থেকেই কাঁঠাল হয়। আবার কোনো কোনো কাঁঠাল উঁচু-নিচু হয়। এর কারণ হলো কাঁঠালের যে অংশটা পরাগায়িত হয়নি সে অংশটা নিচু হয়। মানে ওখানে কোনো কোয়া বা বীজ নেই।
‘স্ত্রী ফুলের গায়ে পাউডার বা রেণু থাকে না। ছোট ছোট লোমের মতো অংশগুলো হলো গর্ভমুণ্ড। পুরুষ ফুল থেকে পাউডারগুলো বা পরাগরেণুগুলো স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডের গায়ে লাগে। তখনই মিলন হয় এবং সেই স্ত্রী ফুলটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি কাঁঠালে রূপান্তরিত হয়। ’
কাঁঠালের পুরুষ ফুল থেকে স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন বাতাস, মৌমাছি, পিঁপড়া, কীট প্রভৃতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। মোট কথা হচ্ছে- এই পরাগায়নটা বাহকের মাধ্যমে হয় বলে জানান ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
বিবিবি/এএটি