নীলফামারী: স্বামীর দিনমজুরির আয়ে চলে না সংসার। অর্ধাহার-অনাহার তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
এজন্য মনিরা ভাবতে শুরু করেন বাড়িতেই কোনো কাজ করে আয় উর্পাজন করা যায় কি না। তাতে সন্তান দেখভালের সঙ্গে চলবে কাজ। স্বামীর আয়ের সঙ্গে তার আয় যোগ হলে সংসারে আসবে সচ্ছলতা। কিন্তু দীর্ঘ দিন চেষ্টার পরও পারেননি সে স্বপ্ন পূরণ করতে। তার সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তাকে বিনামূল্যে একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে সামাজিক ও মানবিক এ সংগঠনটি।
রোববার (১৬ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে জেলা সদরের খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মনিরাসহ হতদরিদ্র মোট ২০ নারীকে সেলাই মেশিন দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
তাদের সবার প্রবল ইচ্ছা, এ মেশিন চালিয়ে আয়-রোজগার করে ফেরাবেন পরিবারের সচ্ছলতা।
মনিরা জানান, প্রায় এক যুগ আগে খোকসাবাড়ি গ্রামের মো. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। এরপর ঘরে আসে বেবী আক্তার (১০) ও বাবু মোজাহিদ নামের দুই সন্তান। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী তারা।
তিনি বলেন, দুই সন্তান পারে না কথা বলতে। চলতে পারে না, খাইতে পারে না নিজের হাতে। এজন্য সার্বক্ষণিক তাদের দেখাশোনা করতে বাড়িইে থাকতে হয়।
স্বপ্নের সেলাই মেশিন পেয়ে আনন্দিত মনিরা বলেন, সংসারোত খুব কষ্ট। স্বামীর কিষান (কৃষি শ্রমিক) খাটার কামাই দিয়া ছয়টা মানষির খাবার জুটে না। কষ্টের কারণে মনটা চায় কোনো কাম-কাজ করি কামাই করিবার। কিন্তু ছাওয়া (ছেলে-মেয়ে) দুইটাক থুইয়া বাড়ি থাকি কোনঠে যাবার পারো না। এলা বসুন্ধরার মেশিন দিয়া বাড়িত বসি সেলাইর কাজ করি কামাই করির পারিম। এলা কামাই সংসারোত সহযোগিতা করির পারিমো।
একই অনুষ্ঠানে সেলাই মেশিন পেয়েছেন আঁখি আক্তার (১৯)। খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের খলিশাপচা গ্রামের আঁখি আক্তার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা অলিয়ার রহমানের দিনমজুরির আয়ে চলে তাদের সাত সদস্যের সংসার। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আঁখি সবার বড়। অভাব অনটনের সংসারে এসএসসি পাশের আগেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিবার। কিন্তু আঁখি তাতে রাজি না হয়ে লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত করতে চান নিজেকে। এমন প্রবল ইচ্ছায এসএসসি পাশের পর ভর্তি হয়েছেন কলেজে। কিন্তু পরিবারে অর্থাভাবে লেখাপড়া প্রায় বন্ধের পথে। এ অবস্থায় আঁখি গ্রামে টিউশনি করে লেখাপড়া চালানোর উদ্যোগ নিয়েও হয়েছেন ব্যর্থ। এজন্য খুঁজতে শুরু করেন সহজ একটি কাজ, যে কাজের আয়ে নিজের ও ভাই-বোনদের লেখাপড়া চালানো যায়। সেই আঁখি আক্তারকে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
স্বপ্ন পূরণের আনন্দে আঁখি আক্তার বলেন, বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করে লেখাপড়া চালানো স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু দিনমজুর বাবার আয়ে সেলাই মেশিন কেনার সাধ্য হয়ে উঠেনি। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার সে স্বপ্ন পূরণ করেছে। এখন বাড়িতে সেলাই করে যা আয় করবো, তা দিয়ে আমার এবং ভাই-বোনদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারব। পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করতে পারব।
সেলাই মেশিন পেয়ে মনিরা এবং আঁখির মতো সবাই খুশি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছ্বাস রায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মো. মনিরুজ্জামান মন্টু। এসময় পূর্ব খোকসাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. মামুন, কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি ভুবন রায় নিখিল, বসুন্ধরা শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত রাফি, সদস্য ফরিদ মিয়া, আমিনুর রহমান, মো. গোলাম হোসেন, নিউজ-২৪ এর জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রশীদ শাহ, বসুন্ধরা শুভসংঘের জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক দীপু রায়সহ অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৫
এসআই