ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

জার্মান নির্বাচন: বুথ ফেরত জরিপে এগিয়ে সিডিইউ/সিএসইউ

সাগর আনোয়ার, জার্মানি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
জার্মান নির্বাচন: বুথ ফেরত জরিপে এগিয়ে সিডিইউ/সিএসইউ সংগৃহীত ছবি

জার্মানিতে প্রায় ৮৪ শতাংশ ভোটারের ব্যাপক অংশগ্রহণের নির্বাচনে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছে। এই জোট প্রায় ২৯-৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

 

অন্যদিকে নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে জার্মানির নিষ্প্রাণ বামদলগুলো। ডি লিংকে (বাম দল) প্রায় ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা গত নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেশি। বুথ ফেরত জরিপে এমনটাই দেখা গেছে।

নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে অতি-ডানপন্থী ও অভিবাসনবিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। তারা প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছে।  

জার্মানির সব রাজনৈতিক দল এ দলের সঙ্গে জোট না করার অলিখিত চুক্তি করায় তারা সরকারে অংশ নিতে পারছে না। তবে আশঙ্কাজনকভাবে এ দলের সমর্থন বেড়েছে।  ফলে সরকারে না থাকলেও তাদের দাবির কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি ২০২১ সালের নির্বাচনে মাত্র ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

অন্যদিকে, সম্প্রতি ডি লিংকের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে বেরিয়ে যাওয়া নেতাদের দল বিএসভিও প্রায় ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন মধ্যপন্থী সমাজতান্ত্রিক দল (এসপিডি) ধারণার চেয়েও কম ভোট পেয়েছে, যা প্রায় ১৬ শতাংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি গত নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম।

সিডিইউ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় বিশ্লেষকদের মতে, তারা মধ্যপন্থী সমাজতন্ত্রী (এসপিডি) দলকে সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারে। তবে এসপিডি মাত্র ১৬ শতাংশ ভোট পাওয়ায় গ্রিন পার্টিও জোটের অংশীদার হতে পারে। ২০২১ সালের নির্বাচনে এসপিডি পেয়েছিল ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট, আর ২০১৭ সালে পেয়েছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ।

নির্বাচনে পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি আশানুরূপ ভোট না পাওয়ার শঙ্কা সত্যি হয়েছে। জরিপ অনুসারে দলটি ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ২০২১ সালে তারা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, আর ২০১৭ সালে পেয়েছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

বর্তমান ভেঙে যাওয়া জোটের শরিক এফডিপি (ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি) এবারের নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটও পায়নি বলে জরিপে দেখা গেছে।

অভিবাসন নীতি পর্যালোচনার ঘোষণা, ভঙ্গুর অর্থনীতি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জার্মানির নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগের কারণে এবারের নির্বাচন ইউরোপ ও বিশ্বে বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময় সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে। সরকার গঠনে আরও এক সপ্তাহের মতো সময় লাগবে বলে জার্মান গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আনুপাতিক ও সরাসরি ভোটে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও জার্মানির নির্বাচন কিছুটা ব্যতিক্রম। দেশটিতে ভোটাররা সরাসরি প্রার্থীর পাশাপাশি দলকেও ভোট দিতে পারেন।

জার্মান সংসদের তথ্য অনুসারে, জার্মান সংসদে ৬৩০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে প্রার্থীরা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটাররা দুটি ব্যালটের মাধ্যমে একদিকে প্রার্থীদের ভোট দেন, অন্যদিকে নিজেদের পছন্দের দলকেও ভোট দিতে পারেন।  

১৬টি রাজ্যে বিভক্ত জার্মানিতে কোনো রাজনৈতিক দলের একজন প্রার্থীও জয়ী না হলেও যদি দলটি মোট ভোটের ৫ শতাংশ পায়, তবে তারা আনুপাতিক হারে সংসদে আসন পাবে।

জার্মান রাজনীতিকদের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের একক আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, বিকেন্দ্রীকরণ এবং সব মত-পথের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এভাবে জার্মানির সংসদ গঠন করা হয়। এছাড়া কমপক্ষে ৫ শতাংশ ভোটের বিধান রাখা হয়েছে, যাতে আঞ্চলিক ও ছোট দলগুলোর আধিক্যে সংসদে অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয়।

জার্মানির ১৬টি রাজ্যের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত সংসদের উচ্চকক্ষ হলো বুন্ডেসরাট। রাজ্যগুলোর স্বার্থ সুরক্ষা ও সুষম অর্থনৈতিক বণ্টন তদারকির জন্য বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে এই উচ্চকক্ষ গঠিত হয়েছে।  

বুন্ডেসরাটে ৬৯টি আসন রয়েছে। কোনো দল বা জোট যদি ৩৫টি আসন নিশ্চিত করতে পারে, তবে তারা বুন্ডেসরাটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নিয়ন্ত্রণের যোগ্যতা অর্জন করে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।