ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মনোহরদী পৌর নির্বাচন: দুই পক্ষের তাণ্ডবে আহত ১২

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
মনোহরদী পৌর নির্বাচন: দুই পক্ষের তাণ্ডবে আহত ১২

নরসিংদী: নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩ কাউন্সিলর প্রার্থী, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে একই দলের মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজনের সমর্থকরা।  

এ সময় হামলাকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অপরদিকে মেয়র প্রার্থী সুজন অভিযোগ করেছেন, প্রতিপক্ষের হামলায় তার দুই ভাইসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে মনোহরদী হিন্দুপাড়াসহ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এ সময় মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজনের শতশত নেতাকর্মী লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিলে গোটা পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ঘটনাস্থলে এসে মেয়রকে বাসস্ট্যান্ড থেকে সরিয়ে দিলে ভোর ৪টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ সুজন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ মোল্লা জাদুর নাম প্রস্তাব করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী তালিকার সকলে মনোনয়ন কেনার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে মেয়র সুজন ছাড়া কেউ মনোনয়নপত্র কেনেননি।  

দলীয় সিদ্ধান্ত শিথিল করার পরও মেয়রের হুমকির মুখে একাধিক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কেউ মনোনয়ন পত্র কিনতে পারেননি। মেয়র সুজন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর স্থানীয় এমপি শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছেন।

কিন্তু পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে বর্তমানে ছয়টিতেই বিএনপির কাউন্সিলর। যাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই মেয়র সুজনের সখ্যতা রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে চারটি ওয়ার্ডে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের প্রার্থী দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী, যা নিয়ে মেয়র সুজনের সঙ্গে মন্ত্রীপুত্র সাদীর মতবিরোধ দেখা দেয়।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ৮টায় মনোহরদী সার্বজনীন দুর্গাবাড়িতে মেয়র আমিনুর রশিদ সুজনের সর্বশেষ উঠান বৈঠক হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক বাবু প্রিয়াশীষ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিল্পমন্ত্রীর ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যকরী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কাউন্সিল প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে যোগ দেন।

রাত ১১টার দিকে সভা শেষে ফেরার পথে কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি ও খোকন রায়ের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে হারুন মাঝির পক্ষে অবস্থান নেন মেয়র সুজনের সমর্থকরা। আর খোকন রায়ের পক্ষে অবস্থান নেন সাদীর সমর্থকরা। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে মেয়রের দুই ভাইসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হন। এ সময় উভয় পক্ষের পাঁচটি মোটরসাইকেল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়র সুজনের নেতৃত্বে শতশত সমর্থক মনোহরদী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন। সেখান থেকে মেয়রের সমর্থকরা প্রথমে মনোহরদী হিন্দুপাড়ার মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং নরসিংদী জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক সুমন বর্মণ, কাউন্সিলর প্রার্থী পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন রায়, সুকোমল সাহার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

হামলা চালানো হয় সাংবাদিক সুমন বমর্ণের ৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিহির রায়ের বাড়ির দোকানে। পরে একে একে চকপাড়া এলাকায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শরীফ রায়হান ও তার সমর্থকদের বাড়িঘর ও অফিসে, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার হোসেনের অফিস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের মডার্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

হামলায় আহতদের মধ্যে চন্দনবাড়ি এলাকার মেয়র সুজনের বড় ভাই মামুনুর রশিদ (৩৫), ছোট ভাই হাসানুর রশিদ তন্ময় (২৫), ইমতিয়াজ মান্নান (৩০), আল সাঈদী সাম্মী (৩২) শফিকুল আলম (৪৫), সোহেল আকন্দ (২৬) মাঝিপাড়া এলাকার মাসুম হাসান শুভ (৩০), লেবুতলা এলাকার নজরুল ইসলামকে (৪০) মনোহরদী উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মামুনুর রশিদ ও শফিকুল আলমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বাসস্ট্যান্ডে মেয়র সুজন এ ঘটনায় মন্ত্রীর ছেলে সাদীকে দায়ী করে তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। ওই সময় মেয়র সুজন আগামী ১৬ তারিখ নির্বাচনের পর মন্ত্রীর লোকজনকে পৌরসভায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন।

জানতে চাইলে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খোকন রায় বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র সুজন ও কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন মাঝি আমার বাড়ি ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে এই বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে যাতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়।

মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায় বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে সাংবাদিক ও বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা দুঃখজনক। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

মনোহরদী পৌরসভার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আমিনুর রশিদ সুজন বলেন, হিন্দুপাড়ায় আমি আমার নির্বাচনী উঠান বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার সময় আমার ওপর অতর্কিতভাবে প্রতিপক্ষরা হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাকে আঘাত করার সময় আমার দুই ভাই আমাকে বাঁচাতে গেলে তারা গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় আমার ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। একই সঙ্গে আমার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনিবার্হী সদস্য মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী বলেন, মেয়র নিজের সুবিধার জন্য বিএনপির কাউন্সিলর বিজয়ী করতে চায়। যেহেতু আমি দলীয় কাউন্সিলরের পক্ষে তাই এটাকে ইস্যু করে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক ও মেয়রের সমর্থকরা নৌকার উঠান বৈঠক শেষে ফেরার পথে আমার ওপর হামলা চালায়। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করেছে। তারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা চালিয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোথাও আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।