ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

চাপমুক্ত আরেকটি বছর পার করলো সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২১
চাপমুক্ত আরেকটি বছর পার করলো সরকার আওয়ামী লীগের লোগো

ঢাকা: বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর পার করলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন টানা তৃতীয়বারের সরকার। এ বছরও ছিল না রাজনৈতিক কোনো চাপ।

তৃতীয় মেয়াদের এই সরকারের দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার মধ্য আওয়ামী লীগ টানা এক যুগ ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডও গড়লো।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। এর পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দলটি। এ বছর আরো একটি বিষয়ে আওয়ামী লীগ তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছেছে, তা হলো ভিশন-২০২১। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচনী ইশতেহারে ভিশন-২০২১ ঘোষণা করে। ওই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

পার করে আসা এ বছরটিতে আওয়ামী লীগ সরকারকে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বা চাপের মধ্যে পড়তে হয়নি। রাজপথে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল বিএনপির দিক থেকেও সরকারের ওপর চাপ তৈরির অথবা আন্দোলনের কোনো জোরালো কর্মসূচি লক্ষ্য করা যায়নি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দিক থেকেও কোনো আন্দোলনের চাপ আসেনি সরকারের ওপরে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে বলতে গেলে সারা বছরই রাজনৈতিক কার্মকাণ্ড ছিল স্থবির।

রাজনৈতিক চাপ না থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় সারা বছরই হিমশিম খেতে হয় সরকারকে। করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশ। ৮ মার্চ দেশে ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পর তা দ্রুত ছড়াতে থাকে। সরকার বাধ্য হয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ২৬ মার্চ থেকে এই ছুটি চলে টানা ৬৬ দিন। এ সময় অর্থনেতিকভাবে দেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সরকার প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। গত ৩১ মে থেকে কোভিডজনিত সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়া হলেও পরিস্থিতি এখনও অব্যাহত থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে।

এ বছরটিতে সরকার ঘোষিত বড় কর্মসূচি ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী মুজিববর্ষ উদযাপন। দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে সরকার মুজিবর্ষের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে মূল কর্মসূচি স্থগিত রয়েছে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিত থাকার কথা ছিলো। মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশি বিদেশি বরেণ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সব কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি একটু কমে এলে নভেম্বরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ঘোষণা অনুযায়ী মুজিববষর্ষের কর্মসূচি যথাযথভাবে উদযাপন করা সম্ভব না হওয়ায় মুজিববর্ষের সময় বাড়ানো হয় ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সরকারের এই বছরটিতে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। করোনা সংক্রমণের শুরুতেই সভা সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত ৩০ জুন সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়ার পরও এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত ছিলো। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত নভেম্বরে  এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় মোড়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় নামে হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামিক দল ও সংগঠন। তারা ভাস্কর্য ভেঙে ফেলারও হুমকি দেয়। এর মধ্যেই কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। এর কয়েক দিন পর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে ভাঙচুর করা হয় ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য। বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্ধারিত স্থানেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন হবে এবং সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য নির্মাণের পূর্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা বরদাস্ত করা হবে না।

বিগত বছরে সরকারের একটি বড় সফলতা পদ্মা সেতু। বছরের শেষ সময় আলোচিত এ সেতু দৃশ্যমান হয়। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

এর পাশাপাশি গত এক বছরে এই সরকারের নেওয়া অন্যান্য কাজও এগিয়ে গেছে। করোনার মধ্যেও কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় এগিয়ে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। রাজধানীতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের গত একটি বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে। প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকার উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ধারা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২১
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।