ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার মামলা নিয়ে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮
খালেদার মামলা নিয়ে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা  আদালতে খালেদা জিয়া। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের তারিখ করার পর থেকেই দলটি নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। রাজনৈতিক এবং আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করেছে তারা।

সব দিক দিয়েই নিজেদের সক্রিয়তা বাড়িয়েছে বিএনপি।  গত ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

কূটনীতিকদের সঙ্গে এই বৈঠকটি ছিল এ সংক্রান্ত তৎপরতারই অংশ। সেখানে তারা মামলার বিষয়টি কূটনীতিকদের অবহিত করেন এবং এ নিয়ে বিএনপির উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।

বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার মামলার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কূটনৈতিকদের অবহিত করেন।

সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে এবং বিদেশিদের সমর্থন পেতে বিএনপি এসব তৎপরতা চালাচ্ছে। কারণ দলটি মনে করে, খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলাটি পরিচালিত করছে। বিদেশিদের কাছে মূলত এ বার্তাটিই দেয়া হয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সরাসরি ও সুনির্দিষ্ট জবাব এড়িয়ে যান। তিনিও অনেকটাই কৌশল করে কূটনীতিকসুলভ জবাবই দিয়েছেন। তবে এই মামলার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং এ নিয়ে চলমান পরিস্থিতি এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, কূটনীতিকদের কাছে বিএনপি এই বার্তাটিই দিয়েছে যে, এটা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। এ কারণে মামলার সম্ভাব্য রায় নিয়ে বিএনপি যথেষ্ট শঙ্কা ও উদ্বেগের মধ্যে আছে। বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই তড়িঘড়ি করে এই মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলাটির রায় দেয়া হচ্ছে। রায় থেকে যদি সরকারের অশুভ মনোভাব প্রকাশ পায় তাহলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে দলটি। এছাড়া উচ্চ আদালতে এই রায় মোকাবেলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এদিকে মামলার রায়ের দিন ধার্য করার পর থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা বিভিন্ন সভা সেমিনারে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন।

রায় ঘোষণার দিনকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি রায়ের দিন মাঠে থাকার ঘোষণাও দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর  সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

রায় ঘোষণার আগে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের সভা আহবান করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

অপরদিকে, দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপিপ্রধান। এছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দলের নির্বাহী কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। দলের ৭০০ নেতাকর্মীকে ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ঐদিন দলের চেয়ারপারসন রায়-পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেবেন। এছাড়া দলের সাংগঠনিক কাঠামো, শৃংখলা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের চিন্তাভাবনাও তুলে ধরবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বাংলানিউজকে বলেন, যদি ষড়যন্ত্রমূলক রায় হয় তাহলে তারা চেষ্টা করবে সাজা দেয়ার। সেক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে এবং ষড়যন্ত্রমূলক রায় দেয়া হলে সে রায় রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানি বাংলানিউজকে বলেন, নেতিবাচক রায়ে আওয়ামী লীগ হয়তো সাময়িক লাভবান হবে, কিন্তু দেশের জন্য লাভের কিছু নাই। এই সরকার জোর করে ক্ষমতায় আছে। আর এই মামলা শেষ হলে ভোট শুরু, বিএনপি সেখানে যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা দেখছি না । এটা একটা চলমান পক্রিয়া যা মধ্য দিয়ে সরকার আবারো ক্ষমতায় যাবার এবং ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার পাঁয়তারা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান বলেন, সিনিয়র নেতারা কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কূটনীতিকরাও এ বিষয়গুলো শুনেছেন, মামলার ব্যাপারটা আসলে কি তা বুঝতে চেষ্টা করেছেন। এভাবে বিএনপির বক্তব্য তারা শুনেছেন। তাদেরও তো ইনফরমেশন, নলেজের দরকার আছে। বিদেশি কূটনীতিকরা আমাদের রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত করেন। । আমাদের রাজনীতিতে তাদের একটা প্রভাব তো আছেই!  

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে কূটনৈতিকদের সঙ্গে কনসাল্ট করা এবং নিজেদের মধ্যে বৈঠক করার মধ্যে আপত্তি জানানোর কিছু দেখি না। এটা তো একটা দল হিসেবে স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে জনদুর্ভোগ করা যাবে না। সেটা যে পক্ষই হোক। আর আদালতকে তার মতো করে চলতে দেয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, এই মামলাকে কেন্দ্র করে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। সরকার মামলাকে প্রভাবিত করছে বলে বিএনপির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।  তবে তার প্রমাণ আসলে কি এবং কোথায়? এটাতো গুরুতর অভিযোগ। এসব অভিযোগের তো ভিত্তি থাকতে হবে। আদালত আদালতের মত করে চলুক। রায় কি হবে তা আদালতের ব্যাপার। আর ভবিষ্যৎ তো পড়েই আছে। আগে থেকে এ ধরনের কথাবার্তা বললে আমি বলবো, ‘এটাও আদালতকে প্রভাবিত করার নামান্তর’।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৮

এএম /জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।